জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: 'ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে'। সঠিক পরিচর্যায় তাকে জাগিয়ে তোলার দায়িত্ব অভিভাবকের। যদিও অনেক ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর অশান্তির বলি হয় শৈশব। সারা জীবনের মতো ক্ষতি হয় শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের। যদিও এদিন বনগাঁ আদালতে দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি। মা-বাবার সম্পর্কের অবনতি যাতে প্রভাব না ফেলে সন্তানের উপর তার ব্যবস্থা করলেন বিচারক। বিচ্ছেদের মামলা চলা দম্পতির চার বছরের কন্যার জন্মদিন পালিত হল আদালত চত্বরেই।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, শম্ভুনাথ পাল ও শিপ্রা পাল বিশ্বাস ২০২২ সাল থেকে আলাদা থাকেন। বর্তমানে উভয়ের মধ্যে চলছে বিচ্ছেদের মামলা। শিপ্রার কাছেই রয়েছে দম্পতির চার বছরের মেয়ে সুনয়না। শম্ভুনাথ হাড়োয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ভিএলই পদে কর্মরত। শিপ্রার আপত্তিতে দীর্ঘ প্রায় সাত মাস মেয়েকে সামনে থেকে দেখতে পাননি। আদালতের নির্দেশ এদিন সেই সুযোগ হয়।
[আরও পড়ুন: এবার ভোজশালায় মিলল দেব-দেবীর মূর্তি! ASI-এর রিপোর্ট জমা হতেই শোরগোল]
শম্ভুনাথই তাঁর পক্ষের আইনজীবী মারফত আদালতের কাছে মেয়ের জন্মদিন পালনের আবেদন জানান। যাতে করে স্ত্রী ও তাঁর মন্দ সম্পর্কের প্রভাব ছোট মেয়ের মধ্যে না পড়ে। বিচ্ছেদের মামলায় বনগাঁ আদালতের বিচারপতি বাবার আবেদনে সাড়া দেন। কোর্ট চত্বরে সুনয়নার জন্মদিন পালনের অনুমতি দেন তিনি। যার পরে আদালত চত্বরে আইনজীবীদের চেম্বার সেজে ওঠে রঙিন বেলুনে। পুতুল, টেডিবিয়ারের মতো খেলনা, কেক... কোনও কিছুরই অভাব ছিল না।
[আরও পড়ুন: অসমে CAA-তে আবেদনকারী মাত্র ৮ জন, পরিসংখ্যান দিয়ে নির্বাসনের হুঁশিয়ারি হিমন্তের]
সব বন্দোবস্ত হওয়ার পর বাবার সামনে আনা হয় সুনয়নাকে। মেয়েকে দেখেই আবেগে ভাসেন বাবা। জড়িয়ে ধরেন চার বছরের সন্তানকে। মেয়ে-বাবার মিলনের সেই দৃশ্যে চোখে জল আসে প্রত্যক্ষদর্শীদের। এরপরই জন্মদিন পালনে কাটা হয় কেক। কোর্ট চত্বরে ব্যস্ততার মাঝেই এমন অনুষ্ঠান দেখতে জমে যায় ভিড়। কেক বিতরণ করা হয় আইনজীবীদের মধ্যে।
দুই তরফের আইনজীবীরা জানান, কোর্টের এই নির্দেশ সমাজে বড় বার্তা দিল। এই ধরনের বিচ্ছেদের মামলায় সন্তানদের উপর যে মানসিক চাপ পড়ে, তা কাটাতে বাবা-মা-সহ পরিবার-পরিজনদের এগিয়ে আসার ও সম্পর্ককে শেষ না করে বাঁচিয়ে রাখার সদিচ্ছা তৈরির বার্তা দেওয়া গেল আজকের ঘটনায়।