নন্দন দত্ত,বীরভূম: ‘বামুন চিনি পৈতে নামে, বামনি চিনি ক্যামনে’? এই প্রশ্নের উত্তর এত কাল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই দিতে হত অনেককে। কারণ ব্রাহ্মণ পরিবারের পুত্র সন্তানদের উপনয়নের চল থাকলেও মেয়েদের তা হত না। এবার সেই রীতি ভাঙছে সমাজে। মেয়েদেরও পৈতে দিতে এগিয়ে আসছে পরিবার। এমনই এক উদাহরণ হয়ে থাকল সিউড়ির (Suri) এক চিকিৎসক দম্পতি ও তাঁদের কন্যা।
সিউড়ি রামকৃষ্ণ পল্লির বাসিন্দা চিকিৎসক দম্পতি বসন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও কৌশানী চট্টোপাধ্যায়। ভাইপো জৈবাতৃকের সঙ্গে মেয়ে কৈরভীর উপনয়নের অনুষ্ঠান করলেন তাঁরা। বিজ্ঞানের সঙ্গে বৈদিক শাস্ত্রের সমন্বয়ের ইচ্ছা ছিল বসন্তবাবুর প্রয়াত বাবা বাঁশরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নাতনির অন্নপ্রাশনের সময় যজ্ঞ করাতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে পুরোহিতরা রাজি হননি। তাঁদের যুক্তি ছিল কেবল পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে যজ্ঞ হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে যজ্ঞ হয় বিয়েতে। বসন্তবাবু জানান, ‘ বাবার যুক্তি ছিল ধর্মে এমন বিধিনিষেধ নেই।পুত্র কন্যার তফাত নেই। শেষ পর্যন্ত বৈদিক মতে এই উপনয়নের আয়োজন করেছি”।
[আরও পড়ুন: অযোধ্যার রামলালা এবার জীবন্ত! দেখা মিলল আসানসোলে, ব্যাপারটা কী?]
বুধবার মেয়ের উপনয়ন ও ভাইপো জৈবাতৃকের উপনয়ন একইসঙ্গে হয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাণসীর পানিনি কন্যা, কলকাতার আর্য সমাজ ও রবিশংকরের বৈদিক ধর্মসংস্থান এই উপনয়ন করিয়েছে। রবিশংকরজীর শিষ্য স্বামী শ্রদ্ধানন্দ জানান, “জন্মের আগে থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ১৬টি সংস্কার আছে। দশম সংস্কার উপনয়ন ধারণ। আগে সকলেরই উপনয়ন ধারণ করার রীতি ছিল। গুরুজী সেই প্রথাই ফিরিয়ে আনতে চাইছেন”। কৈরভীর ঠাকুমা জয়ন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্বামীর ইচ্ছা ছিল। ছেলে সেই ধর্মপথেই চলছে। নাতনিকে পৈতে দিয়ে আমি খুব গর্বিত”। কৈরভীর মা কৌশানী বলেন, “মেয়ে একদিন প্রশ্ন করল ভাইয়ের পৈতে হবে আমার কেন হবে না?তার পর এ নিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনে পড়াশোনা করে পঞ্জিকা ও শাস্ত্র ঘেঁটে দেখলাম কোনও বাধা নেই। মেয়েকে পৈতে দিয়ে শান্তি পেলাম”। অন্যদিকে উপবিত ধারন করে দ্বিজত্ব প্রাপ্ত হয়ে কৈরভী জানাল, “উপনয়ন আমার অধিকার। আমি জেনেছি মেয়েদের উপনয়ন হয়। আমি তাই উপবিত ধারন করে আজীবন তা বহন করব”।