সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে 'এক দেশ এক নির্বাচন' প্রস্তাব। সব ঠিক থাকলে সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনেই পেশ হবে এক দেশ-এক নির্বাচন বিল। কিন্তু লোকসভায় পেশ হলেও পাশ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবার আইন পাশ হলেও সেই আইন কার্যকর করা নিয়েও বহু জটিলতা রয়েছে।
প্রথমত, এক দেশ এক নির্বাচন কার্যকর করতে হলে সংবিধানের পাঁচটি ধারা সংশোধন করতে হবে। এই মুহূর্তে সংসদে মোদি সরকারের যা সংখ্যাবল তাতে এই প্রস্তাব কার্যকর করতে হলে জোট শরিকদের তো বটেই এনডিএ জোটের বাইরেও একাধিক দলের সমর্থন জোগাড় করতে হবে বিজেপিকে।
দ্বিতীয়ত, ভারত বিশাল দেশ। ২৯টি রাজ্য, ৮টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ও ১৪০ কোটি জনসংখ্যা। এত দল এত রাজ্য। ১৯৫২ থেকে যে নির্বাচন শুরু হয়, তখন এত রাজ্য ও রাজনৈতিক দল ছিল না। সেসময় এক দেশ এক নির্বাচন চালু করাটা যতটা সহজ ছিল, এখন ততটাই কঠিন। এখন প্রতি বছর কোনও না কোনও রাজ্যে ভোট হচ্ছে। সেই সব বিধানসভার মেয়াদও আলাদা আলাদা সময় শেষ হচ্ছে। সেই সব রাজ্যের নির্বাচনকে একত্রে করানোটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ। কেন্দ্র ২০২৯-এ সব রাজ্য এবং কেন্দ্রের ভোট একসঙ্গে করাতে চাইছে। এদিকে বাংলার ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে হয় তিন বছরের মাথায় নির্বাচিত সরকারকে ভেঙে দিতে হবে অথবা বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ ২০২৯ পর্যন্ত বাড়াতে হবে। বাংলার মতো এমন বহু রাজ্যে নির্বাচিত সরকার ভাঙতে হবে বা কিছুদিনের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হবে। আগামিদিনে এই প্রস্তাব গৃহীত হলে অনেক রাজ্যে বিধানসভার মেয়াদ কমাতে হবে। আবার অনেক রাজ্যে বিধানসভার মেয়াদ বাড়াতেও হবে। তাতে প্রবল আপত্তি আসতে পারে সেই রাজ্যের সরকারগুলির থেকে।
তৃতীয়ত, যে কোনও সময় দল ভাঙিয়ে সরকার ফেলে দেওয়া যায়। এক দেশ এক নির্বাচন কার্যকর হওয়ার পর কেন্দ্রে বা কোনও রাজ্যে পাঁচ বছরের আগেই নির্বাচিত সরকার পড়ে গেলে, ত্রিশঙ্কু লোকসভা বা বিধানসভার ক্ষেত্রে বা অনাস্থা প্রস্তাবে সরকার পড়ে গেলে কী হবে, সেটাও ভাবনার বিষয়। বিধানসভা ত্রিশঙ্কু হলে এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে, প্রয়োজনে বাকি সময়টুকুর জন্য আলাদাভাবে নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে এক দেশ এক নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিটি। সেক্ষেত্রে 'এক দেশ-এক নির্বাচনের' মূল উদ্দেশ্যই সাধিত হচ্ছে না।
এছাড়া গোটা দেশের সব লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করাতে গেলে বিপুল সংখ্যক ভোটকর্মী প্রয়োজন পড়বে। বর্তমানে যে পরিমাণ ভোটকর্মীকে দিয়ে নির্বাচনের কাজ করাতে হয়, বা যে পরিমাণ নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করতে হয়, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ভোট কর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করতে হবে। তাছাড়া এক দেশ-এক নির্বাচনের মূল যে সমস্যা, তাতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিধানসভা ভোট এবং লোকসভা ভোট চরিত্রগতভাবে আলাদা। এই প্রক্রিয়া শুরু হলে বিধানসভা নির্বাচনগুলি চরিত্র হারাতে পারে। বিরোধীদের আশঙ্কা, দেশে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অফ গভর্নমেন্ট’ গঠনের উদ্যোগ শুরু করেছে মোদি সরকার। তারই পদক্ষেপ হিসাবে এটা ‘লুকনো’ পরিকল্পনা।