বিজ্ঞাপন বলছে, মনের ব্যথাটা বাদ দিলে যে কোনও যন্ত্রণা থেকে আমরা দেব মুক্তি৷ ভরসা জোগাচেছ পেন ম্যানেজমেণ্ট৷ কিন্তু ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ভুঁইফোড় সংস্থাগুলি ব্যথা কমানোর প্রতিশ্রূতির আড়ালে বিপদ ডেকে আনছে না তো? শরীরী যন্ত্রণা কমানোর সঠিক পথ দেখালেন ফর্টিস হাসপাতালের বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন ডা. রাকেশ রাজপুত ও নারায়ণ মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের বিশিষ্ট অ্যানাস্থেসিস্ট এবং পেন ফিজিশিয়ান ডা. অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়৷
মৌশাখী বোস: টেলিভিশন কিংবা রেডিও খুললেই এখন নজরে আসে ‘স্টপ সাফারিং স্টার্ট লিভিং’ বিজ্ঞাপন৷ কিন্তু কতটা বিশ্বাসযোগ্যতা আছে পেন ম্যানেজমেণ্টের? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন– এই সকল সংস্থার চিকিৎসা হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি কিংবা কবিরাজি কোনওটির দ্বারাই স্বীকৃত নয়৷ ব্যবহৃত স্টেরয়েডজনিত ড্রাগ সাময়িক ব্যথা কমালেও ভবিষ্যতে বিপদ বাড়াচ্ছে না তো? পেইন ম্যানেজমেণ্টের বেসরকারি সংস্থাগুলি FDA দ্বারা স্বীকৃত নয়৷ পুনরায় কার্টিলেজ উৎপাদন করার দাবি করে থাকে৷ কিন্থু এখনও অবধি মেডিক্যাল সায়েন্সে এমন কোনও ওষুধ বা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি যার দ্বারা পুনরায় কার্টিলেজ উৎপাদন করা যাবে৷ বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত না হয়ে জেনে নিন কীভাবে পাবেন ব্যথা থেকে মুক্তি—
ডা. রাকেশ রাজপুত ও ডা. অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়৷
ব্যথার কারণ
বয়সজনিত কারণ, কোনও দুর্ঘটনা, অপারেশনের পর যন্ত্রণা, বিশেষ কিছু ডিজেনারেটিভ অসুখ, কোনও অঙ্গের অসুখ, মানসিক রোগ, নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, ক্যানসার থেকে হতে পারে ব্যথা৷ ব্যথার অনুভূতি মূলত শরীরের মেনসরি ফাইবার নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছয়৷ ব্যথা শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশের কোষের ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত থাকে৷
ক্রনিক পেন – এই ব্যথায় মানুষ বহু বছর ধরে ভোগেন৷ যেমন – বিভিন্ন আর্থ্রাইটিস, পিঠের ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, মাইগ্রেন, মাথা যন্ত্রণা৷
অ্যাকিউট পেন – হঠাৎ করে কোনও দুর্ঘটনা, অপারেশন কিংবা কোনও অসুখ হলে যে যন্ত্রণাগুলি হয় তাকে অ্যাকিউট পেন বলা হয়৷
লো ব্যাক পেন – সাধারণত ৬০-৮০ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষ এতে আক্রান্ত হন৷ আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস এবং রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের জন্য এই যন্ত্রণা হয়৷
চিকিৎসা
এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকরা কিছু ব্যথা কমানোর ওষুধ দেন৷ কিন্তু এগুলি দীর্ঘ সময় ধরে খাওয়া ঠিক নয়৷ তাই ‘মনোওজন থেরাপি’ কিংবা ফেসেট জয়েণ্ট ব্লক অথবা ডিকমপ্রেশন অথবা নার্ভ ব্লক করা হয়৷
হাঁটুর যন্ত্রণা – হাঁটুর যন্ত্রণায় ভুগছেন এমন রোগী এখন ঘরে ঘরে৷ এটি মূলত অস্টিও আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওপোরোসিস থেকে হয়৷ এক্ষেত্রে চিকিৎসক প্রাথমিক পর্যায়ে পেন কিলার দেন৷ তারপর কিছু ক্ষেত্রে PRP (প্লেটলেট রেজিউম প্লাজমা) ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়৷ তাতে ভাল কাজ না হলে মনোওজন থেরাপি, তা না হলে টোটাল নি রিপ্লেসমণ্ট (TKR) সার্জারি করা৷ পরে এতেও ব্যথা না কমলে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন করে নার্ভে ব্লক করা হয়৷
মাথা ব্যথা – মাইগ্রেনে ও টেনশনে মাথা ব্যথা, মানসিক চাপে মাথার যন্ত্রণা, ট্রাইজেমিনাল হেডেক (কানের নিচ থেকে চোয়াল) অক্সিপিটাল হেডেক (মাথার পিছনের দিকে)৷ এক্ষেত্রে মূলত ব্যথার ওষুধ ও প্রয়োজনে ইণ্টার ভেনশনাল পেন ম্যানেজমেণ্ট করতে হয়৷
ঘাড়ে ব্যথা – সাধারণত স্পন্ডিওলাইসিস কিংবা স্পন্ডিওলিথেসিস থেকে এই যন্ত্রণাগুলি হয়৷ এক্ষেত্রে চিকিত্সক ফিজিওথেরাপি (মাসল স্ট্রেনদেনিং এক্সারসাইজ) ব্যথার ওষুধ ও প্রয়োজনে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অবলম্বন করে থাকেন৷
ক্যানসারে যন্ত্রণা – ক্যানসারের শেষের ধাপে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়৷ ফলে রোগীকে কড়া ডোজের ওষুধ দেওয়া হয়৷ একইসঙ্গে ইঞ্জেকশন দিয়ে তার সেন্সরি নার্ভগুলিকে ব্লক করে দেওয়া হয়ে থাকে৷
ইণ্টারভেনশনাল পেন ম্যানেজমেণ্ট – এক্ষেত্রে যে নার্ভগুলি পেন সিগন্যাল বহন করে সেগুলিকে বিশেষ মিলিমাল ইনভেসিভ টেকনিকের মাধ্যমে ড্রাগ বা রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন দিয়ে ব্লক করে দেওয়া হয়৷
এর সুবিধা–
ডে কেয়ার প্রসিডিওর
- খরচ কম • কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন হয় না • দ্রূত কর্মজীবনে ফেরা যায় • ব্যথার ওষুধের প্রয়োজন হয় না৷
অ্যাডভান্সড পেন ম্যানেজমেণ্ট –
- রেডিওফ্রিকোয়েন্সি নার্ভ অ্যাবলেশনে – নার্ভগুলিকে নির্দিষ্টমাত্রায় উত্তাপ দিয়ে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই যথাযথভাবে অসাড় করে দেওয়া হয়৷
- নিউরোমডুলেশন – ক্রনিক ব্যাক পেন, লেস পেন, মাইগ্রেন এবং অন্যান্য ক্রনিক পেন-এর ক্ষেত্রে স্পাইনাল এবং পেরিফেরাল স্টিমুলেটর ব্যবহার করা হয়৷
- ইণ্ট্রাথেকাল ড্রাগ ডেলিভারি সিস্টেম – ব্যথা বন্ধ করার জন্য স্পাইনাল কর্ডের পেন রিসেপ্টারের মধ্য দিয়ে অল্প পরিমাণে ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে৷ ক্যানসারজনিত ব্যথা, স্প্যাসটিসিটির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়৷
- ইউএসজি গাইডেড ব্লক – সার্জারি করার পূর্বে স্থায়ীভাবে অ্যানাস্থেশিয়া করার সময় সেন্সরি নার্ভ ব্লক করা হয়৷ যার ফলে সার্জারির পরে ব্যথা অনুভব হয় না৷
The post বিজ্ঞাপনের ব্যথা appeared first on Sangbad Pratidin.