বিনিয়োগের ‘ফিনটেক’ নিয়ে চর্চা ক্রমশ বাড়ছে। কৌতূহলী লগ্নিকারীরা জানতে চাইছেন এর সুযোগ-সুবিধার কথা। ফাইন্যান্স আর টেকনোলজির মেলবন্ধনে গঠিত ‘ফিনটেক’-এর চল আগামিতে যে আরও বাড়বে, বর্তমানই তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সহজে ঋণ কীভাবে পাবেন, বিনিয়োগ কীভাবে করবেন আর ইনসিওরেন্স খাতেই বা কীভাবে উপকৃত হতে পারবেন, এবার রইল তারই বিস্তারিত ব্যাখ্যা। সংকলনে নীলাঞ্জন দে
ফিনটেকের ব্যাপারে কৌতূহলী মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, কারণ ব্যবহারিক জীবনে প্রযুক্তি এবং ফাইন্যান্স-এর মেলবন্ধন অনেককেই উপকৃত করছে- আগামি দিনে ফিনটেকের চল বাড়বে, এত দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। এই দুইয়ের সংমিশ্রণের নানা দিক আছে, তবে আজ আমরা কেবল সেই দিকগুলিই আলোচনা করব, সেগুলি সাধারণ লগ্নিকারীদের চটজলদি সাহায্য করেছে।
আমাদের তিনটি প্রধান আলোচ্য:
(ক) লোন, (খ) ইনভেস্টমেন্ট (গ) ইনসিওরেন্স
কীভাবে এই তিন ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ফিনটেকের সুবিধা পাবেন, তাই আজকের চর্চার বিষয়বস্তু। পেমেন্টস নিয়ে চর্চা আজ বাদ রাখলাম।
আজ পাঁচ মিনিটের মধ্যে লোন পেয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়, যদিও তা শর্তসাপেক্ষ। যদি আপনি কয়েকটি শর্ত পূরণ করেন, তাহলে আর কাগজপত্র তৈরি, ব্যাংকের স্যাংশন লেটার, লোন ডিসবার্সমেন্ট- সব কিছুই অতি শীঘ্র হয়ে যেতে পারে। টাকাও আপনার অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট হবে খুব তাড়াতাড়ি, বেশি কাঠখড় না পুড়িয়েই।
[আরও পড়ুন: মহামারী বদলে দিয়েছে লেনদেনের প্রক্রিয়া, ডিজিটাল ব্যাংকিংই এখন ভবিষ্যৎ]
ফিনটেকের কল্যাণে দ্রুত লোন আজ বহু ছোট ব্যবসায়ী, বা সাধারণ ট্রেডার, বা সেই রকমই শ্রেণিভুক্ত ব্যাংক গ্রাহকের জীবনে গতি এনেছে, নতুন রাস্তার সন্ধান দেখিয়েছে। এই প্রসঙ্গে ‘ইনস্ট্যান্ট লোন’ সম্বন্ধে বলে রাখি। কীভাবে এত দ্রুত ‘অ্যাপ্রুভাল’ হয়, তা আপনার জানা দরকার। প্রযুক্তি ব্যবহার করেই আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট মুহূর্তে পরীক্ষা করা যায়, আপনি যে লোন নেওয়ার জন্য আদর্শ ‘ক্যান্ডিডেট’ তাও বলা যায়। তাই এ ধরনের ফিনটেকের মূল কাজ হল আপনার রিস্ক প্রোফাইল মেপে নেওয়া – যদি সব ঠিক থাকে তাহলে এই ধাপটি পেরিয়ে যেতে পারবেন সহজেই।
এরপর যা বাকি থাকল, তার প্রথমটি ‘অনলাইন ভেরিফিকেশন’ – যে ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে সেগুলির সত্যতা যাচাই করাও খুব সহজেই হতে পারে। বলাই বাহুল্য, এতে সময় এবং খরচ, দুই-ই বাঁচে।
মনে রাখুন, ফিনটেকের অন্যতম সুবিধা হল ‘স্মল টিকেট লোন’-এর ব্যবস্থা করে দেওয়া। মানে, বেশ ছোট মাপের লোনও পাওয়া যেতে পারে। যে গ্রাহক (মনে করুন তিনি দোকানের কোনও সামগ্রীর ভেন্ডার) ছোট মাপের লোন চাইবেন, তিনি ফিনটেকের সাহায্য পেতে পারেন। বড় ব্যাংকে পৌঁছে যাওয়ার দরকারই হবে না, কারণ আপনার পকেটে এঁটে যায়, এমন ছোট-মাঝারি সুযোগও আজ ফিনটেকই দিতে পারে, বড় ব্যাংক হয়তো সে তুলনায় শ্লথগতিতে কাজকর্মে অভ্যস্ত। অবশ্য শ্লথগতির দিন যে ফুরিয়েছে তা ফিনটেকের পরের সুবিধাটুকু (ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে) দেখলেই বুঝতে পারবেন।
ব্যাংকিং ক্ষেত্রের সম্প্রসারণের জন্য ফিনটেক অনেক হাততালি কুড়োবে। অচিরেই এই সেক্টরটি আরও বড় অংশ নিতে চলেছে বলেই মনে হয়। এখানও লিস্টেড ফিনটেকের সংখ্যা তেমন বেশি নয়, তবে ভবিষ্যতে স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত ফিনটেকের সংখ্যা অনেকই থাকবে। ফার্মা, গ্রিন এনার্জি, বায়োটেকের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় শেয়ার হোল্ডাররা ফিনটেকেও বিনিয়োগ করার আরও সুযোগ পাবেন।
একাধিক বড় ফিনটেক কোম্পানি ইতিমধ্যে পরিকল্পনা নিয়েছে নিজেদের স্টক মার্কেটে লিস্ট করার ব্যাপারে। ডিজিটাল পেমেন্টসের ক্ষেত্রে এই ধরনের বেশ কিছু সংস্থা প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। ফিনো পেমেন্টস ব্যাংকের আইপিও ইতিমধ্যে মার্কেটে চলে এসেছে। ইস্যুর সাইজ ১,২০০ কোটি টাকা। ইন্ডিয়া পেমেন্টসও সেবির দপ্তরে অফার ডকুমেন্ট ফাইল করেছে বলে খবরে প্রকাশ।
এছাড়াও লিস্টেড সংস্থাগুলির বাইরে ফিনটেকে বহু ধরনের প্রাইভেট ইকুইটি কোম্পানির বিনিয়োগ হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এই ট্রেন্ড আগামী দিনগুলিতে আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
(লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা)