সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গাড়ি-বাড়ি কেনা থেকে ব্যক্তিগত প্রয়োজন সর্বত্রই ঋণ নেওয়ার হিড়িক ব্যাপকভাবে বেড়েছে নাগরিকদের মধ্যে। তবে ঋণ নিলেই তো হল না, তা সুদ-সহ শোধও করতে হয় গ্রাহককে। কিন্তু সাদা চোখে গ্রাহক ঋণ পরিশোধের যে অঙ্ক দেখেন, বাস্তবে তা হয়ে ওঠে অনেক বেশি। ফলে কোনও রকম ঋণ নেওয়ার আগে দেখে নেওয়া যাক, আসল ও সুদের বাইরে আর কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা ধার্য করে ব্যঙ্কগুলি?
প্রসেসিং চার্জ: ঋণ নেওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে এই চার্জ করে ব্যাঙ্ক। সাধারণত ঋণের অঙ্কের ৫ শতাংশ পর্যন্ত ধার্য করা হয় এক্ষেত্রে। আবেদনের সময় অগ্রিম অথবা টাকা অ্যাকাউন্টে আসার সময় এই অর্থ কেটে নেওয়া হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে অবশ্য এই চার্জ মুকুব করে ব্যাঙ্ক।
ভ্যারিফিকেশন চার্জ: ক্রেডিট স্কোর খতিয়ে দেখা ও গ্রাহকের আর্থিক লেনদেনের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য যাচাই করার নামে এই চার্জ করা হয়।
ইএমআই সংগ্রহের চার্জ: যদি ঋণগ্রহিতা চেক তোলার সিদ্ধান্ত নেন সেক্ষেত্রে প্রি-ইনস্ট্যান্স ফি ধার্য করা হয়।
চেক বাউন্স বা ইএমআই ডিজওনার চার্জ: যদি চেক বা ইএমআই-এর মাধ্যমে টাকা কাটার সময় অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকে তবে ব্যাঙ্ক।
দেরিতে টাকা দেওয়ার জরিমানা: টাকা শোধ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহক যদি বিলম্ব করেন সেক্ষেত্রে এই চার্জ করে ব্যাঙ্ক।
রিপেমেন্ট মোড বদলের চার্জ: ঋণগ্রহীতা ইএমআই-এর তারিখ বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর বদল করতে চাইলে জরিমানা বাবদ কিছু টাকা কাটে ব্যাঙ্ক।
পার্সিয়াল প্রিপেমেন্ট চার্জ: কিছু ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা বরাদ্দ ইএমআই-এর থেকে বেশি অর্থ আগাম জমা করে দ্রুত ঋণ শোধের চেষ্টা করেন, সেক্ষেত্রেও চার্জ করে ব্যাঙ্ক। তবে এমনটা করতে চাইলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তা করা যায়।
বন্ধকী চার্জ: কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের আগে লোন পরিশোধ করতে চান, তাহলে ব্যাঙ্ক বাড়তি টাকা চার্জ করে। সেটা মূলত লোনের একটা শতাংশ। কারণ তাতে ভবিষ্যতে সুদ থেকে যে টাকা পেতে পারত, তার ক্ষতি হয়।
ডুপ্লিকেট স্টেটমেন্ট চার্জ: ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টের দ্বিতীয় কপি নিতে গেলেও কিছু টাকা চার্জ করে ব্যাঙ্ক।
নগদে লেনদেনের ক্ষেত্রে চার্জ: চেক বা ইএমআই-এর বাইরে নগদ টাকায় ঋণ শোধ করতে গেলে বাড়তি জরিমানা গুনতে হয় গ্রাহককে।
ঋণ বাতিল সংক্রান্ত চার্জ: ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর আপনি যদি সেই ঋণ বাতিল করতে চান সেক্ষেত্রে ঋণ মঞ্জুরের সময় থেকে পরিশোধের সময়সীমা পর্যন্ত সুদের কিছু অংশ ও ফেরতযোগ্য নয় এমন সমস্ত প্রক্রিয়াকরণ চার্জ ও কর বাবদ নির্দিষ্ট অর্থ জরিমানা করা হয়।
১৮ শতাংশ হারে জিএসটি: উপরোক্ত সমস্ত চার্জের উপর ব্যাঙ্কের তরফে আবার জিএসটি লাগু করা হয়। সেই অর্থ ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে কেটে নিয়ে তা সরকারের ঘরে পাঠায় ব্যাঙ্ক।
সুতরাং ঋণ নিলেও তার নেপথ্যে রয়েছে বড় অঙ্কের নানা ধরনের গুপ্ত চার্জ। যা না জেনেই ঋণ নেন গ্রাহক। ফলে পরবর্তীতে সমস্যায় পড়েন গ্রাহকরা। ফলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ভবিষ্যতের সমস্যা এড়াতে কোন কোন খাতে ব্যাঙ্কগুলি কত টাকা জরিমানা করতে তা বিস্তারিত জেনে তবেই যেন ঋণ নেন গ্রাহক।