সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আলো ও অন্ধকার বরাবরের প্রতিবেশী। তবে হই হই করে বাঁচা আলোর জীবনের তলায় চাপা পড়ে যায় স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার জীবন! কপালের ফেরে ভাল থাকা আমরা আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত থাকি এতটাই, যে খেয়াল থাকে না এই সমাজের অনেকেই ভাল নেই! ভাল না থাকা সেইসব মানুষেরই ছবি তোলেন কেরালার বছর চব্বিশের ফটোগ্রাফার বিষ্ণু সন্তোষ। সমাজ যাঁদের প্রত্যাখান করেছে, অনেক ক্ষেত্রে পরিবারও যাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি, শুধুমাত্র তাঁদের ছবিই তোলেন বিষ্ণু।
বিষ্ণুর কথায়, “কোনওদিনই ছকে বাঁধা জীবন পছন্দ হয়নি আমার। সকলেই যে ছবি তোলেন সেই ছবি তুলতে চাইনি কখনও। বারবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি, একটা গ্যালারিতে, মিউজিয়ামে কিংবা একটা ফটো বুকে ছবি নির্বাচিত হলেই কি আমি খুশি হব?”
[আরও পড়ুন: মজাই মজা! অফিস ছুটির পর আর ফোন করতে পারবেন না বস! জারি নয়া নিয়ম]
বিষ্ণু যে এটুকুতেই খুশি নন, তা তাঁর ছবির বিষয় ভাবনাতেই স্পষ্ট। অ্যাসিড আক্রান্ত মেয়ে, ধর্ষিতা, গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় বদলে যাওয়া জীবনের ছবি তোলেন তিনি। বিষ্ণু সন্তোষের বিশ্বাস, এইসব মেয়েদের বেদনার, লড়াইয়ের গল্প বলতে জানে তাঁর ক্যামেরা। যেমন, সম্প্রতি বিষ্ণু ছবি তুলেছেন তরুণী সাহিনা খুঞ্জুমুহম্মদের। তারকা নায়িকা বা সুন্দরী মডেলদের কায়দায় সাহিনাকে নিয়ে আস্ত ফটোশুট করে ফেলেছেন বিষ্ণু। ছোটবেলায় একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায় সাহিনার। বেঁচে ফিরলেও ওই ভয়ঙ্কর ঘটনার পরেই বদলে যায় সাহিনার জীবন। কারণ শরীরের সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে যায় সাহিনার মুখও। একাধিক সার্জারি হলেও তা আর আগের মতো হয়নি কখনওই। আয়নায় নিজেকে দেখে ভয় পেতেন খোদ সাহিনাও। এরপর সমাজ যে ‘কুৎসিত’ সাহিনাকে প্রত্যাখান করবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু হাল ছাড়েননি সাহিনা। কারণ মুখ পুড়লেও মন, মেধা, মনন পোড়েনি যে তাঁর। তাই তিনি আজ ‘অন্ধকারে’ থাকা এমন বহু মানুষের অনুপ্রেরণা। কীভাবে?
সাহিনা খুঞ্জুমুহম্মদ আজ পেশায় চিকিৎসক। তিনি কেরালার থিরুপুনিথারা হোমিও মেডিক্যাল কলেজের মেডিক্যাল অফিসার। একসময় এই মানুষটাই ভাগ্য বিপর্যয়ে দমবন্ধ করা চার দেওয়ালের জীবনের মধ্যে আটকে পড়েছিলেন। তবে দেওয়াল ভাঙার সাহস দেখিয়ে ছিলেন সাহিনা। বিষ্ণুর দাবি, বেদনাকে ছাপিয়ে যাওয়া এই লড়াইয়ের কাহিনিই ক্যামেরার কলমে লিখতে চান তিনি।
[আরও পড়ুন: বিরাট সুদৃশ্য ফুলে পচা মাংসের গন্ধ! এক দশক পর ফোটা ফুল দেখতে উপচে পড়ল ভিড়]
গত চার বছরে ধরেই এমন সব ‘অন্য ছবি’ তুলে চলেছেন বিষ্ণু। ভালবাসাই যে পেশার মোক্ষ। সাহিনার মতো আরও কাজ করেছেন তিনি। এই তো কিছুদিন আগে বিয়ের ছবিও তুললেন। তবে সাধারণ বিয়ে না। এই বিবাহ বাসর ছিল বিশেষভাবে সক্ষম ফতিমা আসলা ও শিল্পী ফিরোজ লেডিয়াথের।