shono
Advertisement

বন্ধ্যাত্বের সমস্যা কাটিয়ে এবার কম খরচেই সন্তানের জন্ম দিন

দুশ্চিন্তা হতাশার দিন শেষ। The post বন্ধ্যাত্বের সমস্যা কাটিয়ে এবার কম খরচেই সন্তানের জন্ম দিন appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:33 PM Sep 18, 2018Updated: 08:33 PM Sep 18, 2018

দুশ্চিন্তা হতাশার দিন শেষ। সন্তান কোলে হাসি মুখে বাড়ি যাওয়ার উপায় বললেন বার্থ ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকের কর্ণধার ও বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম খাস্তগীর। শুনলেন কৃষ্ণকুমার দাস

Advertisement

বিজ্ঞানের হাত ধরে টেস্ট টিউব বেবি ও সুপ্রজননবিদ্যার প্রয়োগে বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে এখন অনেক হতাশ-দম্পতি ‘বাবা’, ‘মা’ ডাক শুনে জীবনে পূর্ণতা ফিরে পাচ্ছেন। গত চার দশকে বিশ্বে ৫০ লক্ষের বেশি শিশুর টেস্টটিউবে জন্ম হলেও এখনও অনেকের কাছেই নয়া চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যয়বহুল। তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই শুধুমাত্র খরচের কারণে বন্ধ্যাত্ব দূর করে মা হওয়ার সুবিধা নিতে পারছেন না। আবার অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ বিষয়টি না জেনে শুধুমাত্র বেশি খরচ হবে ভেবেই এমন চিকিৎসা করান না। এটাই এখন অনেক বেশি কষ্ট, দুঃখেরও।

[জানেন, প্রসাধনী সামগ্রীতে লুকিয়ে থাকে বিপদের বিষ?]

তবে আগের তুলনায় এখন কলকাতায় খরচ কিছুটা কম হয়েছে। কারণ, তিনটি। প্রথমত, আগের তুলনায় ওষুধ ও যন্ত্রপাতির দাম অনেকটা কম হওয়ায় চিকিৎসার খরচ কমেছে। দ্বিতীয়ত, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মান উন্নত হওয়ায় কম ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে। তৃতীয়ত, জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি ছাড়া শুধুমাত্র কাউন্সেলিং বা দু-একটা ওষুধ দিয়ে সহজে বাবা-মা হচ্ছেন অনেক দম্পতি। এছাড়াও আগের চেয়ে সংখ্যায় রোগী বেশি আসায় খরচ কম পড়ছে।

এবার বলা দরকার কে বা কারা চিকিৎসা করালে উপকৃত হবেন। (১) নারীর বয়স যদি ৩৮ বছরের বেশি হয় (২) পুরুষের জটিল সমস্যা থাকলে। (৩) নারীর ডিম্বনালীতে যদি কোনও সমস্যা থাকে। (৪) স্ত্রীর শরীরে মারাত্মক ধরনের এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে।

অভিজ্ঞতা বলছে, যে সমস্ত রোগী অল্প ওষুধেই চিকিৎসায় সাড়া দেন তাঁদের টেস্ট টিউব বেবি চিকিৎসার খরচ কমই হয়। আজকাল সামান্য ওষুধে হয়তো ডিম্বাণু কম তৈরি হয় কিন্তু তার গুণমান বেশ ভাল হয়। আবার অল্প ওষুধে ডিম্বাণু উৎপাদন হওয়ায় জরায়ুর দেওয়ালের ক্ষতি হয় না। আর তাই শুক্রাণুর সঙ্গে মিলনের পর ভ্রূণ তৈরি হলে সেটি প্রতিস্থাপনের পরেও জৈবিক নিয়মে জরায়ু সঠিকভাবে কাজ করে। তবে স্বল্প খরচে অল্পসংখ্যক ভ্রূণ তৈরি হওয়ায় গর্ভধারণের সাফল্য কিছুটা কম হয়।

সঠিক পরিমাণে ক্লোমিফেন সাইট্রেট ও কম পরিমাণে গোনাডোট্রপিন ইঞ্জেকশন স্বল্প খরচে খুব ভাল কাজ দিচ্ছে। বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় গোনাডোট্রপিন ও অ্যান্টাগনিস্ট এবং অ্যাগনিস্ট ট্রিগার দিয়ে তৈরি হওয়া ভ্রূণ প্রতিস্থাপন না করে হিমায়িত করে রেখে পরের মাসে প্রতিস্থাপন করলে ভাল সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে রোগীর শরীরে হরমোন নিঃসরণ থেকে শুরু করে জীবনশৈলীও বেশ খানিকটা প্রভাব ফেলে চিকিৎসায় সাফল্যর ক্ষেত্রে।

বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় সাফল্য কিন্তু রোগীর সহযোগিতা ও তথ্য প্রদানের মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বিষয়গুলি হল (ক) বন্ধ্যাত্বের সময়সীমা এবং অতীতে কোনও প্রেগন্যান্সি এসেছিল বা নষ্ট হয়েছিল কি না। (খ) রোগিণীর বয়স, ওজন ও উচ্চতার সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য (বিএমআই) (গ) মাসিকের দুই বা তিনদিনে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন ও অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোন এবং ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর ঘরের আকার-আয়তন ও পরিমাণ, (ঘ) জরায়ুর দেওয়ালের গুণগত মান ও ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের দিন।

এই চিকিৎসা যদি সমস্যার প্রথমাবস্থায় হয় তবে সাফল্যের হার অনেক বেশি। আবার অনেক দম্পতির ধারণা, এই চিকিৎসা না কি খুব যন্ত্রণাদায়ক এবং গর্ভাবস্থার পুরো সময়টাই নাকি বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। এই ধারণা ভুল। ডাক্তার হিসাবে আমায় প্রায় একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, ‘ডাক্তারবাবু, বাচ্চাটা সুস্থ-স্বাভাবিক হবে তো?’ অর্থাৎ অনেকের কাছে আজও প্রচলিত ভুল ধারণা হল সহায়ক বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় জন্মানো শিশুদের জন্মগত ত্রুটি থাকে।

[অতিরিক্ত সুরাপানে বেড়েছে রক্তচাপ? ঘরে বসেই মেপে নিন ব্লাড প্রেশার]

চিকিৎসার একটা গোপন বিষয় জানাই, তাহলে ভুল ধারণা কিছুটা দূর হবে। অল্প ওষুধ দিয়ে ডিম্বাশয়কে উদ্দীপিত করলে এবং একটি মাত্র নির্বাচিত ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করলেই যমজ সন্তানের সমস্যা এড়ানো যায়। এই চিকিৎসায় শিশুর জন্মগত ত্রুটি খুব কম। কারণ, প্রতিস্থাপনের আগে ভ্রূণের ক্রোমোজমের পরীক্ষা হয়। জন্মগত ত্রুটির জন্য বেশিরভাগটাই দায়ী হচ্ছে বাবা বা মায়ের ক্রোমোজোমাল ত্রুটি। সমীক্ষা বলছে, যেসব দম্পতির ত্রুটিপূর্ণ সন্তান হয় তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স বেশি, চেহারা মোটা এবং রক্তচাপ, ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা আছে বা ডিম্বাণু, শুক্রাণুর গুণমান খুব খারাপ।

৪০ বছরের আশেপাশে বয়স আছে এমন একজন নারীর শরীরে যদি বড় মাপের কোনও জটিলতা না থাকে তবে বন্ধ্যাত্ব দূর করার প্রথমবারের চিকিৎসা এখন ৭০-৮০ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে। এক্ষেত্রে নিডল, ক্যাথিটার ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের জন্য ১৫ হাজার এবং ওষুধ লাগবে ৩০-৫০ হাজার টাকা। নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা লাগছে। এছাড়াও ইউএসজি এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হয়ে থাকে। সন্তানলাভে এখন ৭০-৮০ হাজার টাকা ধরলেও উন্নতমানের চিকিৎসার মাধ্যমে সাফল্য পেতে আনুমানিক এক লক্ষ টাকা খরচ পড়ছে। তবে ওই জ্যোতি আলুর দামে কখনওই চন্দ্রমুখী পাওয়া যায় না। ভাল ফলের জন্য একটু বেশি দাম দিতেই হয়। কিন্তু আমাদের একটা টার্গেট রয়েছে, তা হল অচিরেই বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে খরচ মাত্র ৫০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা। আমার স্থির বিশ্বাস, শীঘ্রই আইভিএফ-এর খরচ নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালে নিয়ে আসা খুব একটা কঠিন হবে না। এখন আমি জুনিয়র ডাক্তারদের ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ করে তুলছি। টার্গেট, যত দ্রুত সম্ভব বেশি সংখ্যায়
বিশেষজ্ঞ তৈরি করে বাংলার চিকিৎসা জগতে ছড়িয়ে দেওয়া। এতে অনেক বেশি রোগীকে কম খরচে পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ আসবে। তখন দেশের বহু মায়ের মুখে হাসি ফুটবে, পরিবারেও খুশির-হাওয়া আসবেই আসবে।

যোগাযোগ ৯৮৩০৪৪৫৫৬৬, ৯৮৩০৭৭৮৮৯৯

The post বন্ধ্যাত্বের সমস্যা কাটিয়ে এবার কম খরচেই সন্তানের জন্ম দিন appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement