অনেক হয়েছে সিগারেট খাওয়া৷ এবার ছাড়ুন৷ পিষে মারুন৷ বুধবার ‘অ্যান্টি টোব্যাকো ডে’৷ এবার থেকে সিগারেট-ফ্রি জীবন কাটান৷ কিন্তু কীভাবে সম্ভব? জিনিয়া সরকারকে সেটাই জানালেন অ্যাপোলো গ্লেনিগলস হসপিটালের বিশিষ্ট পালমোনোলজিস্ট ডা. সুস্মিতা রায়চৌধুরি ও সাইকিয়াট্রিস্ট জয়রঞ্জন রাম।
প্রতি বছর ৭০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় তামাকজাত দ্রব্য সেবনের জন্য৷ যার শীর্ষে ধূমপান৷ ২০৩০ সসালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৮০ লাখের বেশি৷ এমনটাই দাবি করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’৷ রোজকার জীবনে বেড়ে চলা মানসিক চাপ, দ্বন্দ্ব, প্রতিযোগিতা থেকে নিমেষে বেরিয়ে আসার পথ হিসাবে বেশিরভাগই টান দেন সিগারেটে৷ বয়স কিংবা লিঙ্গ উপেক্ষা করে এই পথে এখন সবাই চলছে৷ কেউ না বুঝেই নিজের ক্ষতি করে, কেউ আবার জেনেও বেরিয়ে আসতে পারে না৷ তবে সর্বনাশ থেকে বাঁচতে মনের জোর চাই৷
[বাড়ি চেয়ে বিজেপি বিধায়কের হাতে চরম অপমানিত হলেন মহিলা]
সুখটানে অসুখ: ধূমপান সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে ফুসফসে৷ যা থেকে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমার সমস্যা খুব বেড়ে যায়৷ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় হার্টও৷ ধূমপান হার্ট রেট বাড়ায়, রক্তচাপ বৃদ্ধি করে, পেশির মধ্যে রক্ত, অক্সিজেন ঠিক মতো পৌঁছয় না৷ যে কোনও বয়সিদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের একটি বড় কারণ ধূমপান৷ বর্তমানে ক্যানসারের সবচেয়ে বড় কারণ ধূমপান৷ টানা ২০ বছরের বেশি সময় দিনে ১-২টি করে সিগারেট খেলে ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা থাকে৷ দীর্ঘদিন ধূমপানের জন্য সিওপিডি, ক্রনিক ব্রংকাইটিস-এর সমস্যা দেখা দেয়৷ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ধূমপান করলে সদ্যোজাতর সঠিক বৃদ্ধি হয় না৷ শিশুর নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়৷ বেশি ধূমপান করলে খিদে কমে, পেটে আলসার হতে পারে৷ ধূমপানের অভ্যাস মারাত্মক ক্ষতি করে অল্পবয়সিদের৷ মানসিক অবসাদ বাড়তে থাকে৷ খিদে কমায় ওজন কমে, ঘনঘন কাশি, শ্বাসকষ্ট হয়৷ সাইনাসের সমস্যা দেখা যায়৷ ঋতুস্রাব স্বাভাবিক হয় না৷
[সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ালে দু’পক্ষকেই শাস্তি, পুলিশকে বার্তা মমতার]
সর্বনাশা: সিগারেট বা তামাকের নিকোটিন সরাসরি মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে৷ মস্তিষ্কের ডোপামিন (স্নায়ু উদ্দীপক) কেমিক্যালকে বেশি মাত্রায় উদ্দীপিত করে৷ এই কেমিক্যাল অনুভূতি, আবেগ, মোটিভেশন, সুখ বুঝতে সাহায্য করে৷ ধূমপানের মাধ্যমে নিকোটিন রক্তে মেশে৷ যতক্ষণ নিকোটিন শরীরে বা রক্তে বেশি থাকে ততক্ষণ ব্রেন উদ্দীপিত থাকে৷ মন ভাল হয়, চাপ কমে৷ সেই কারণে ধূমপান থেকে মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায়৷ তবে নিকোটিন শরীরে খুব কম সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়৷ ফলে একবার ধূমপান করার পর যখনই তার প্রভাব শরীর থেকে কমতে থাকে তখন আবার ধূমপান করার ইচ্ছা জাগে৷ এই ভাবেই আস্তে আস্তে ধূমপানে আসক্তি বাড়ে৷ নিকোটিন মন ভাল করলেও এরসঙ্গে আরও অনেক বিষাক্ত কেমিক্যাল শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয়, যা থেকে একাধিক অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি হয়৷
[উচ্চমাধ্যমিকে সসম্মানে উত্তীর্ণ মা-ছেলে, পাশ করতে পারলেন না বাবা]
ঝুঁকির প্যাসিভ স্মোকিং: যে ধূমপান করবে তার যেমন ক্ষতি তেমনই ক্ষতি চারপাশে থাকা মানুষদেরও৷ বিশেষ করে শিশুদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়৷ প্রেগন্যান্ট মহিলাদের সামনে ধূমপান শুরু করলে সদ্যোজাতের ওজন খুব কম হয়৷ বড়দের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং থেকে ফুসফুস ইনফেকশন, সর্দি, শ্বাসকষ্ট হয়৷ বিষাক্ত কেমিক্যাল শরীরে প্রবেশের মাত্রা সবচেয়ে বেশি সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং-এ৷ যা হার্টের অসুখের সম্ভাবনা বাড়ায়৷ হতে পারে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেল, স্ট্রোক৷
[দেশে ধর্ষণের সমস্যার নয়া সমাধান বাতলালেন অক্ষয় কুমার]
আসক্তি থেকে মুক্তি:
- বন্ধু কিংবা সহকর্মী যতই একটা সিগারেট খেতে অনুরোধ করুক শুনবেন না৷ সহকর্মীকেও ধূমপান ছাড়ার জন্য বোঝান৷ যদি ধূমপান না করে কোনওভাবেই থাকতে না পারেন তা হলে চেষ্টা করুন যাঁরা ধূমপান করে না তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে৷
- অবসর সময়ে বই পড়ে, গান শুনে ও হাঁটতে গিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন৷
- মুখ ও হাত ব্যস্ত রাখতে মুখে চুইংগাম রাখুন, হেলদি স্ন্যাক্স খান৷ ভিডিও গেম খেলুন৷
- খাওয়া শেষ হলে তাড়াতাড়ি টেবিল ছেড়ে উঠুন৷ তারপর নিজের যে কাজ করতে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে সেই কাজ করুন৷ তবে সিগারেট নয়৷
- যে পরিমাণে চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তা দ্রুত কমান৷ যে কাপে ও যে জায়গায় গিয়ে চা খান সেটা বদলান৷ নতুন অভ্যাস শুরু করুন৷
- গাড়িতে ধূমপান কখনওই নয়৷ গাড়ি অ্যাসট্রেতে নোট রাখুন, “স্মোকিং ইজ ইনজ্যুরিয়াস টু হেলথ৷”
- পার্টিতে গেলে স্মোকিং জোন থেকে দূরে থাকুন৷ ইচ্ছে ও মনের জোরকে বেশি গুরুত্ব দিন৷
- সিগারেট না খেয়ে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করলে উপকার বেশি৷ এতে শরীরে নিকোটিনের চাহিদাও মেটে ও সিগারেটের প্রতি আসক্তিও কমে৷
যোগাযোগ: ০৩৩ ৬০৬০ ১০৬৬
আরও জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।
The post জেনে নিন কীভাবে মুক্তি পাবেন ধূমপানের নেশা থেকে? appeared first on Sangbad Pratidin.