সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ধর্ম- আমাদের ধারণ করে। অন্ধকার থেকে আলোর পথের দিশা দেখায়। তা যেমন আমাদের অন্তরাত্মাকে পরিশুদ্ধির পথে নিয়ে যায়, তেমনই প্রভাব ফেলে ব্যবহারিক জীবনেও। বেশ কিছু সমীক্ষার ফলাফল তাই জানাচ্ছে, ধর্মে মতি থাকলে মানুষের খরচ করার প্রবণতাও কমে।
ধর্ম মানে কাঁসর-ঘণ্টার ঝনঝনানি শুধু নয়। ধর্ম মানে উগ্র বিশ্বাস, অন্ধবিশ্বাসও নয় কিংবা দেবতার স্থানে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকাও নয়। ধর্ম আমাদের অন্তরের শুদ্ধশক্তির স্ফূরণ ঘটায়। আমাদের উত্তীর্ণ করে দেবত্বে। ফলত ধর্মে মতি থাকলে তার প্রভাব পড়ে সর্বত্র। কেনাকাটা নির্ভর করে আমাদের জীবনযাপনের উপর। যাঁর যত বিলাসে মন, তাঁর খরচও তত বেশি। জাগতিক ভোগের মোহ থেকে আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কিনে ফেলি। কিন্তু বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, যাঁরা ধার্মিক তাঁরা এই অতিরিক্ত খরচ বর্জন করেন। ভোগের সামগ্রী চোখের সামনে থাকলেও তাঁরা সাধারণত তা এড়িয়ে যান। অর্থাৎ ভোগের সভ্যতার হাতছানি উপেক্ষা করতে পারেন। ফলে খরচও কমে।
[ শ্রাবণ মাসে মহাদেবকে তুষ্ট রাখতে মেনে চলুন এই রীতিগুলি ]
এ শুধু নেহাত কথার কথা নয়। বেশ কিছুদিন আগে মার্কিন মুলুকে এই নিয়ে অন্তত গোটা পাঁচেক সমীক্ষা চালানো হয়। পরীক্ষা বলাই ভাল। সেখানে মানুষের হাতে অর্থের অভাব নেই। অর্থাৎ চাইলেই তাঁরা খরচ করতে পারেন। কিন্তু খরচ করবেন কি? এই উদ্দেশ্যেই একাধিক সামাজিক পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। যেমন একটি পরীক্ষায়, ধর্মে মতি থাকা ক্রেতাদের সামনে প্রয়োজনীয় মুদি জিনিসপত্র রাখা হয়েছিল। তাঁদের যেমন যা দরকার সেগুলো কিনে নেন। এরপর তাঁদের সামনে বিশেষ বিশেষ কিছু জিনিস রাখা হয়। যেগুলোর হয়তো তেমন প্রয়োজন নেই, কিন্তু শখ করে মানুষ কিনেই ফেলেন। যাতে কিনতে তাঁরা আগ্রহী হন সেজন্য অনেক সস্তা দামে জিনিসগুলি অফার করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা জানান, জীবনের প্রয়োজন যখন মিটে যাচ্ছে, তখন খামোখা বাহুল্যে মন দিয়ে কী লাভ! তাঁরা সেগুলো কেনেননি। এরকম একাধিক পরীক্ষা হয়। তা থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করেও দেখা যায়। দেখা যাচ্ছে, যাঁরা ধর্মে বিশ্বাস রাখেন তাঁরা অপচয় বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করেন কম।
আর একটি পরীক্ষায় কিছু মানুষকে একটি ভিডিও দেখানো হয়েছিল। যেখানে একজন বক্তা ঈশ্বরের শক্তি নিয়ে কথা বলছিলেন। আর একদল ক্রেতাকে দেখানো হয় অয়েল পেন্টিংয়ের নানা বিষয়। এরপর তাঁরা যখন বিশেষ একটি জিনিস কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন, তখন দেখা যাচ্ছে, যাঁরা প্রথম ভিডিওটি দেখেছিলেন তাঁদের খরচের প্রবণতা অন্তত ১০ শতাংশ কম। এর থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোনকম ভয় বা চাপ নয়। আসলে যাঁরা ধর্মে বিশ্বাস থাকে তারা প্রয়োজনের বাইরে খরচ করতে চান না। তাঁদের জীবনযাপনই একটি নির্দিষ্ট পথে চলে। যেখানে খরচ কম হয়।
[ ঋতুস্রাবের সময় মন্দিরে কেন ঢোকা যায় না? জেনে নিন বিজ্ঞানসম্মত কারণ ]
ভোগবাদী সভ্যতায় যত অর্থই হাতে আসুক না কেন, সন্তুষ্টি যেন কিছুতেই আসে না। অন্যদিকে পণ্যসভ্যতা চায় মানুষ খরচ করুক। এই দ্বন্দ্ব গোটা বিশ্বের দেশগুলিকেই কাবু করে রেখেছে। এর প্রতিরোধেরও কোনও উপায় সে অর্থে নেই। দেখা যাচ্ছে, একমাত্র ধর্মবিশ্বাসই মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে পারে। জীবনে কোনটা প্রয়োজন ও কোনটা বাহুল্য তা চিনিয়ে দেয়। পণ্যে নয়, শান্তি যে অন্তরে- তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে ধর্মে মতি থাকলে খরচের বহরও কমে।
The post ধর্মে মতি থাকলেই কমে খরচ! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? appeared first on Sangbad Pratidin.