সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: শুধু খাবারের জন্য দল বেঁধে আসা নয়। হস্তীযুথের শাবকের জন্ম দেওয়ার নিরাপদ ঠিকানা দক্ষিণবঙ্গের (South Bengal) বনভূমি! বনদপ্তরের গত পাঁচ বছরের রিপোর্টেই এই ছবি স্পষ্ট। ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা থেকে আসা হাতির (Elephant) দল ফি বছরে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ জঙ্গলে ৫ থেকে ৭ টি করে শাবকের জন্ম দিয়েছে। চলতি বছরের ৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবসে হাতি-মানুষের সহাবস্থানে এই রিপোর্টকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসাবেই দেখছে অরণ্যভবন।
দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়া (Purulia), বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ছাড়াও মাঝেমধ্যে পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমানের একটি অংশেও ঝাড়খণ্ড থেকে আসা হাতির দল ঢুকে পড়ছে। ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ থেকে আসা হাতি
প্রায় দুদশক ধরেই পুরুলিয়ার বিভিন্ন বনাঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। এই বুনো হাতিদের মধ্য থেকে দলছুট হয়ে যাওয়া একাধিক হাতি জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে বনদপ্তরের বন্যপ্রাণ শাখা থেকে রেসিডেন্টের (Resident) তকমাও পেয়ে গিয়েছে। এমন উদাহরণ যেমন পুরুলিয়ায় রয়েছে। রয়েছে বাঁকুড়া, মেদিনীপুরেও।
[আরও পড়ুন: রাজস্থানে রক্তপাত, বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ঘুমন্ত মেয়েকে কুপিয়ে খুন বাবার!]
একইভাবে আমন ধানের মরশুমে অর্থাৎ ধান পাকার সময় অক্টোবরের শেষ থেকে দলমার হাতির দল মেদিনীপুর হয়ে বাঁকুড়ায় ঢোকে। এটাই রুটিন। তারপর আমন
মরশুম পার হলেই আবার দল বেঁধে দলমায় ফিরত। কিন্তু সেই ছবিটার অনেকাংশেই বদল হয়েছে। পুরুলিয়া ছাড়াও বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের পাঞ্চেত ডিভিশন সহ মেদিনীপুরের রূপনারায়নপুর ডিভিশনে হাতির দল থেকেই যাচ্ছে। থেকে যাচ্ছে ঝাড়গ্রামেও। দীর্ঘদিন ধরে তারা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে করতে শাবকের জন্ম দিচ্ছে। বনদপ্তরের রিপোর্টেই রয়েছে, আমনের মরশুমে পাকা ধান খেয়ে নিজেদের ডেরা ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশায় ফিরে গেলেও স্রেফ শাবকের জন্ম দিতে দক্ষিণবঙ্গের বনভূমিতে ঘাঁটি গাড়ার উদাহরণ পেয়েছে রাজ্যের বনবিভাগ।
গত বছর পুজোর সময় অর্থাৎ অক্টোবরের শেষের দিকে বাঁকুড়ার পাঞ্চেত ডিভিশনের বাঁকাদহ বনাঞ্চলে ৩০-৪০ টি হাতি বেশ কিছুদিন থেকে যায়। তারপর বনদপ্তর জানতে পারে, হস্তি শাবকের জন্ম দিয়েছে ওই বুনো হাতির দল। এই বিষয়টি এলাকায় চাউর হয়ে গেলেও বন্যপ্রাণ সুরক্ষায় ধারাবাহিক সচেতনতার প্রচারে ওই হাতির দলকে বিরক্ত করেননি ওই এলাকার মানুষজন। তারপর ওই শাবক হাঁটার মতো পরিস্থিতিতে এলে ওই বুনো হাতির দল তাকে নিয়ে ওই জঙ্গল ছাড়ে। সেইসময় পাঞ্চেত ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা তথা বর্তমানে পুরুলিয়া ও কংসাবতী উত্তর বন বিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, ” বেশ কয়েক বছর ধরে প্রাথমিকভাবে আমরা যে তথ্য হাতে পেয়েছি তা থেকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে ঝাড়খণ্ড (Jharkhand), ওড়িশা থেকে আসা হাতির দলের শাবকের জন্ম দেওয়ার নিরাপদ ঠিকানা দক্ষিণবঙ্গের বনভূমি। গত ৫ বছরে পশ্চিমবঙ্গের এই বিস্তীর্ণ এলাকায় ফি বছরে ৫ থেকে ৭ টি করে হস্তী শাবকের জন্ম হয়েছে।” পরবর্তীকালে ওই হাতির দল শাবক নিয়ে নিশ্চিন্তে তাদের ডেরায় ফিরে গিয়েছে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর পুজোর সময় অর্থাৎ অক্টোবরের শেষের দিকে রূপনারায়ণপুর ডিভিশনের ধাদিকার জঙ্গলে একটি হাতির দল হস্তিশাবকের জন্ম হয়। এই ঘটনার কিছুদিন আগে এই বনবিভাগের পাতিশোল এলাকায় আমলাগোড়া রেঞ্জে একটি হস্তীশাবকের জন্ম হয়। এমন উদাহরণ রয়েছে পুরুলিয়াতেও। বছর দুয়েক আগে কোটশিলা বনাঞ্চলে ঝাড়খণ্ড থেকে আসা হাতির দল এই এলাকায় হস্তি শাবকের জন্ম দেয়। ২০২০ সাল নাগাদ কোভিডের সময়েও এই বনাঞ্চলের খামার বিটের জঙ্গলে হস্তী শাবকের জন্ম হয়।
[আরও পড়ুন: ‘ডার্লিং’ শব্দ যৌন ইঙ্গিতমূলক, অচেনা মহিলাকে বলা অপমানজনক, পর্যবেক্ষণ হাই কোর্টের]
হাতি সাধারণত ১৮ থেকে ২০ মাস গর্ভবতী থাকে। একেবারে শেষ পর্যায়ে দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলে এসে শাবকের জন্ম দিয়ে গিয়েছে এমন একাধিক উদাহরণ হাতে পেয়েছে
বনবিভাগ। গত ৫ বছরে হাতির হামলায় যেমন মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। তেমনই কমেছে এই বন্যপ্রাণের মৃত্যুর সংখ্যাও। হাতি-মানুষের সংঘাত কমে সহাবস্থানের যেন সার্থক রূপ নিচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের বনভূমি। অরণ্য ভবনকে পাঠানো রিপোর্টে এই তথ্যই রয়েছে। এনিয়ে রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, “বন্যপ্রাণ-মানুষের সংঘাত নয়। বাংলার বনভূমি বন্যপ্রাণদের নিরাপদ বাসস্থান হয়ে উঠুক সেই লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে আমাদের সচেতনতার প্রচার চলছে। আর তার সুফলও মিলছে। “