ফেরান্দো পরবর্তী সময়ে মোহনবাগান এই যে অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো দৌড়চ্ছে, তার পিছনে মূল কারণ অনেকে বলেন হাবাসের মস্তিষ্ক। অনেকে বলেন জনি কাউকোর যোগ দেওয়া। কারণ যাই হোক ঘটনা হচ্ছে, রবিবার আইএসএলের ফিরতি ডার্বির আগে টগবগ করে ছুটছে মোহনবাগান। আর মাঠের ভিতর দলের স্পিড কন্ট্রোল এই মুহূর্তে যাঁর হাতে, সেই জনি কাউকো (Joni Kauko)ডার্বির আগে একগুচ্ছ প্রশ্নের সামনে, যে উত্তরগুলো সবুজ-মেরুন সমর্থকরাও ভীষণভাবে জানতে চাইছেন। শুনলেন দুলাল দে।
সত্যি করে বলুন তো, ফেরান্দো পরবর্তী সময়ে মোহনবাগানের এরকম ঘুরে দাঁড়ানোর দৌড়নোর দৌড়ে কার অবদান বেশি, আপনি না হাবাস?
কাউকো: আমি তো জানি, কোচকে নিয়ে আমাদের ২৫ জনের স্কোয়াড। একটা দলের ভাল খেলার পিছনে তাহলে শুধুমাত্র একজন বা দু’জনের অবদান হবে কেন? আমরা একটা স্কোয়াড, যেখানে ২৫ জনের সমান অবদান রয়েছে। কোনও একজনের ব্যক্তিগত সাফল্য বা ব্যর্থতার জায়গা নেই।
ফেরান্দো-হাবাস দু’জন কোচের অধীনেই খেলেছেন আপনি। অথচ দু’জন কোচেরই খেলার স্টাইল, ফর্মেশন সব কিছু একে অপরের থেকে অনেকটা আলাদা। এই দু’জন কোচের মধ্যে কার কোচিংয়ে খেলে আপনি বেশি আনন্দ পেয়েছেন?
কাউকো: দেখুন, শুধু কোচ নয়, কোনও ক্ষেত্রেই একজনের সঙ্গে আরেকজনের কোনও তুলনা আমি পছন্দ করি না। এটা ঠিক নয়। আর যদি হাবাস এবং ফেরান্দোর মধ্যে কোচিং স্টাইলের তুলনার কথা বলতে চান, তাহলে একটাই কথা বলব, দু’জনের কোচিং স্টাইলকেই আমি অসম্ভব শ্রদ্ধা করি।
[আরও পড়ুন: চাপের কাছে নতিস্বীকার ইস্টবেঙ্গলের? ক্রীড়ামন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কাটল ডার্বির টিকিট বৈষম্য]
আপনার উপর দল নির্ভর হয়ে পড়ল। তারপর চোট পেয়ে দলের বাইরে গিয়ে দীর্ঘদিন দেশে রইলেন। এই দীর্ঘ সময়ের পরও ফের মোহনবাগানের প্রথম দলে ফিরে আসা কতটা কঠিন ছিল?
কাউকো: চোট থেকে সেরা ওঠার পর আগে ঠিকভাবে রিহ্যাব করি। যখন রিহ্যাব ঠিকভাবে শেষ হয়েছে, তখন ফিনল্যান্ডে আমার ক্লাবে ধীরে ধীরে প্র্যাকটিসও শুরু করে দিই। আর এই সময়টায় আমার সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন মোহনবাগান কর্তারা। ফিনল্যান্ডে আমি যখন ফিটনেস বাড়ানোর জন্য তৈরি হচ্ছিলাম, সেই সময় প্রায় ৬ মাস ধরে নিয়মিত আমার সঙ্গে মোহনবাগান কর্তারা যোগাযোগ রাখেন। আমাদের মধ্যে কথা বার্তায় ঠিক হয়, সঠিক সময় এলে আমি ফের মোহনবাগানে ফিরে আসব। যদিও এখন মুখে যেভাবে বলছি, পুরো ব্যপারটা এতটা সহজ ছিল না। পুরোপুরো ফিট হয়ে আসার লড়াইটা বেশ কঠিনই ছিল আমার জন্য।
সুপার কাপে ডার্বি হারের ম্যাচটা গ্যালারিতে বসে দেখেছিলেন হাবাস। আর ঠিক এরপরেই দলের দায়িত্ব নেন তিনি। সুপার কাপে হারের পরই কি আপনাকে দলে চেয়ে দ্রুত আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন হাবাস?
কাউকো: একটু আগেই তো বললাম, ফের কলকাতায় আসার আগে টানা ৬ মাস ধরে আমার সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন যোগাযোগ রেখে ছিলেন মোহনবাগান কর্তারা। সুপার কাপে হারের ঠিক পরই আমাকে দলে ফেরানোর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমাদের দু’পক্ষের আলোচনায়, আমার ফেরার সিদ্ধান্তটা আগেই নেওয়া হয়েছিল। আর সুপার কাপে হারের পিছনে আমার মনে হয়, জাতীয় দলের ৯জন ফুটবলার না থাকার বিষয়টিই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর এই কারণেই সুপার কাপে হার। তারসঙ্গে আমাকে ফিরিয়ে আনার কোনও সম্পর্ক নেই।
তথ্য বলছে, আপনি সবুজ-মেরুন জার্সি পরে খেলছেন অথচ মোহনবাগান ডার্বি হেরেছে, এরকমটা কোনওদিন হয়নি। সদ্য মোহনবাগান যে দুটো ডার্বিতে হেরেছে, সেই দুটো ম্যাচেই কিন্তু আপনি মোহনবাগান দলে ছিলেন না। ফের ডার্বিতে আপনি দলে থাকবেন। এবার কি ডার্বিতে তাহলে প্রতিশোধ নেওয়ার পালা?
কাউকো: আমার ব্যক্তিগত ধারণা, শেষ দুটি ডার্বি হারের মধ্যে সুপার কাপের হারটাকে ধরা ঠিক হবে না। একটা দল সেরা ৯ জন জাতীয় দলের ফুটবলার ছাড়া খেললে এমনিতেই অনেকটা পিছিয়ে মাঠে নামে। মানে, অসম লড়াই বলতে পারেন। এরকম ভাবে দুর্বল হয়ে ডার্বি খেলতে নামলে কিছু করার নেই। আমার ব্যক্তিগত মত হল, আরও একটু দেখেশুনে সময় বুঝে সুপার কাপের আয়োজন করা উচিত। তাহলেই একমাত্র প্রত্যেকটি দল, ঠিকঠাক ভাবে পূর্ন শক্তিতে মাঠে নামতে পারবে। ডুরান্ডের গ্রুপ পর্যায়ে মোহনবাগান যেরকম হেরেছে, ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গ্রুপ স্টেজে হারার মধুর প্রতিশোধও নিয়ে নিয়েছে।
কুয়াদ্রাত কোচ হয়ে আসার আগে গত মরশুমে ইস্টবেঙ্গলকে দেখেছিলেন। এই মরশুমেও ইস্টবেঙ্গলকে দেখছেন। কুয়াদ্রাত যোগ দেওয়ার পর ইস্টবেঙ্গলের কোনও পার্থক্য চোখে পড়ছে?
কাউকো: আমার চোখে তো কিছুটা হলেও পার্থক্য চোখে পড়ছেই। কুয়াদ্রাতের কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গল আগের মরশুমের থেকে এখন অনেকটাই জমাটি ফুটবল খেলছে। যেখানে ফাঁক ফোকর অনেক কম থাকছে।
আপনি স্ট্রাইকার পজিশনের ফুটবলার নন। অথচ এবারের ডার্বিতে সমর্থকদের চোখ আপনার উপরেই থাকবে। এরজন ডার্বি খেলতে নামার আগে আলাদা করে কোনও চাপ অনুভব করছেন?
কাউকো: ঠিক চাপ বলব না। কারণ, কোনও ক্ষেত্রেই আমি চাপ বোধ করি না। বলতে পারেন, সমর্থকদের ভরসার স্থল হওয়ার জন্য নিজের উপর দায়িত্ববোধ অনেক বেড়ে গিয়েছে। কারণ, সমর্থকরা আমার উপর ভাল পারফরম্যান্সের জন্য ভরসা করছেন।