shono
Advertisement

Breaking News

বর্ষায় ঈশ্বরের নিজের দেশে

ইতিহাস আর প্রকৃতির কোলে উদযাপিত হোক এই বর্ষা! The post বর্ষায় ঈশ্বরের নিজের দেশে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 10:38 AM Jul 02, 2016Updated: 07:16 PM Feb 27, 2019

সুশ্বেতা ব্রহ্মচারী: সোমবার থেকে শনিবার৷ সেই সকালে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়া, সারাদিনের কাজের পর বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দশটা৷ একটা দিন ছুটি, তাও সেই কাজের মধ্যে চলে যায়৷
অবশ্যই, এই বেঁচে থাকাটাও ঈশ্বরেরই আশীর্বাদ!
কিন্তু, যদি সামনাসামনি তাঁর অপার দাক্ষিণ্য উপভোগ করতে হয়?
গন্তব্য হবে কেরল! ঈশ্বরের নিজের দেশ!

Advertisement


কলকাতা থেকে রওনা দিলে কোচি কেরলের প্রবেশদ্বার হিসেবে সবথেকে সুবিধাজনক৷ কখনও পর্তুগিজরা, কখনও ওলন্দাজরা এই শহরের দখল নিয়েছে৷ শেষবেলায় কোচি ছিল ব্রিটিশদের কাছে পরাধীন৷ শহরটায় এখনও আনাচে-কানাচে পড়ে রয়েছে ডাচ, পর্তুগিজদের পায়ের ছাপ৷ একটা গোটা দিন রাখাই যেতে পারে এই বন্দর-শহরের ইতিহাসের সঙ্গে নস্টালজিক হতে৷ ফোর্ট কোচিতে গেলে এখনও দেখা যাবে সেই শতাব্দীপ্রাচীন মাছ ধরার প্রযুক্তি ‘চাইনিজ ফিশিং নেট’৷ এই চাইনিজ ফিশিং নেট কোচিতে পর্যটকদের এক মূল আকর্ষণ৷ এছাড়াও কোচিতে রয়েছে বেশ কিছু ইউরোপীয় চার্চ, মিউজিয়াম, যা সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে রেখেছে ইতিহাসকে৷ আশপাশে বেশ কিছু ছোট ছোট দ্বীপও রয়েছে৷ সব মিলিয়ে কোচিতে একটা দিন বেশ ভালই কাটবে৷ ইতিহাসকে পিছনে ফেলে এবার পালা প্রকৃতির কাছে যাওয়ার৷


পাহাড় ঘেরা ছোট শহর মুন্নার৷ কোচি থেকে মুন্নার বেশ লম্বা রাস্তা৷ পাহাড়ের ছোট ছোট আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ১৬০০ মিটার উঁচুতে উঠতে প্রায় ছ-সাত ঘণ্টা সময় লেগে যায়৷ পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলে অবস্থিত এই হিল স্টেশন জুড়ে শুধুই রঙের খেলা৷ দিগন্তবিস্তৃত চা-বাগান দেখলে মনে হবে ঈশ্বর বুঝি তাঁর ড্রয়িং রুমের বারান্দায় সবুজ কার্পেট বিছিয়ে রেখেছেন৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও মুন্নারের আরও এক আকর্ষণ হল বন্য ছাগল৷ শুনে ভাববেন, এত দূরে আসা শেষে কি না ছাগল দেখতে৷ এই ছাগল যে সাধারণ ছাগলদের থেকে অনেকখানি আলাদা, তা এক ঝলক দেখলেই বোঝা যায়৷ লম্বা শিং আর লোমশ চেহারার এই বন্য ছাগল, ‘নীলগিরি তাহর’ এখন অবলুপ্তদের তালিকায়৷ আগে হিমালয়ান রেঞ্জে দেখা মিললেও এখন নীলগিরি ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না৷ নীলগিরি থেকে চোখ চালালে আশপাশে দেখা যাবে ছোট ছোট অনেক ঝরনা পাহাড়ের গা বেয়ে বয়ে যাচ্ছে৷ সবুজে মোড়া পাহাড়ের গা বেয়ে বেয়ে যাওয়া ঝরনাগুলোয় রোদ পড়লে মনে হয় নীলগিরি বুঝি হিরের গয়নায় সেজেছে!


মুন্নারের পরের গন্তব্য সবুজের গহ্বরে পেরিয়ার টাইগার রিজার্ভ৷ মুন্নার থেকে কুমিলি– এটাও অনেকখানি পথ৷ এই যাত্রাপথে দেখা মিলবে অনেক ঝরনার৷ বর্ষাকালে প্রায় সব ঝরনা থেকেই জল উপচে পড়ে৷ ঝরনার ঝাঁপিয়ে পড়ার আওয়াজে গমগম করে পাহাড়৷ কুমিলিতে আসার মূল কারণ পেরিয়ার ফরেস্ট৷ এই জঙ্গল ভ্রমণের জন্য ভোরবেলা থেকেই লাইন পড়ে যায়৷ তাই যত তাড়াতাড়ি গিয়ে বোটের টিকিট নিয়ে নেওয়া যায়, ততই ভাল৷ বোটে করে জঙ্গল সাফারি করতে সময় লাগবে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা৷ দু’দিকে হরিণ, ময়ূর বা অন্যান্য পশুদের দেখা মিললেও বাঘের দেখা মেলা নিতান্তই ভাগ্যের৷


জঙ্গল ভ্রমণ সেরে এবার রওনা দেওয়া আলেপ্পির দিকে৷ আলেপ্পি অর্থাত্‍ কেরলের মূল আকর্ষণ ব্যাক ওয়াটার৷ ব্যাক ওয়াটারের জন্য এখানে দু’রকম বোটের ব্যবস্থা রয়েছে৷ এক ধরনের বোট সকল মানুষের জন্য৷ যে কেউ এখানে টিকিট কেটে উঠতে পারে৷ অন্যটা হল রিজার্ভ বোট৷ সাধারণত ট্যুরিজম কোম্পানিগুলো এই রিজার্ভ বোটেই ব্যবস্থা করে রাখে৷ এছাড়া কাশ্মীরে যদি হাউজ বোটটা মিস করে গিয়ে থাকেন, সে ইচ্ছা এখানে পূরণ করে নিতে পারেন৷ ব্যাক ওয়াটারে রাত কাটানোর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর হাউজ বোট-এর ব্যবস্থা৷ সামনে সীমাহীন নীল জল৷ দু’পাশে সবুজের উঁকিঝুঁকি৷ সারি দিয়ে নারকেল গাছের মেলা৷ ঈশ্বরের নিজের দেশ বলেই হয়তো এই শহরকে এত সুন্দর করে নিজের হাতে রং-তুলির টান দিয়েছেন৷ ব্যাক ওয়াটারের গণ্ডি একটা নির্দিষ্ট এলাকার পর শেষ হয়ে যায়৷ কিন্তু সৌন্দর্যের নেশায় মাতাল পর্যটকের সফর যেন চলতেই থাকে৷


আলেপ্পিতে ব্যাক ওয়াটার শেষ করে এবারের গন্তব্য কোট্টায়াম৷ পাহাড়ের মাথার এই শহর মূলত কেনাকাটা করার জন্য প্ল্যানে রাখা৷ কেরলের বিখ্যাত হোমমেড চকোলেটের সারিবদ্ধ অনেক দোকান এখানে রয়েছে৷ একটু দেখেশুনে নিতে পারলে দামে আর স্বাদে দু’দিকেই বেশ কয়েক গোল দেবে দামি কোম্পানির চকোলেটকে৷ কেনাকাটা ছাড়াও কোট্টায়াম পর্যটকদের জন্য বিশেষ কিছু শো-এর ব্যবস্থা রাখে, যা মূলত কেরলের সংস্কৃতিকে তুলে ধরে৷ মার্শাল আর্ট থেকে কথাকলি, কেরলের নানা প্রতিভার চোখ-ধাঁধানো দর্শন পাওয়া যায় এখানে৷ প্রকৃতির সৌন্দর্য থেকে একটু ব্রেক নিয়ে এক রাত থেকে যাওয়ার জন্য কোট্টায়াম মন্দ জায়গা নয়৷


দশ-বারো দিনের সফর এবার প্রায় শেষের দিকে৷ শেষ দিয়েই তাই শেষ করা৷ ভারতবর্ষের শেষ প্রান্ত, কন্যাকুমারী৷ চোখে না দেখলে এখানে সমুদ্রে রঙের খেলা অনুভব করা যায় না৷ বঙ্গোপসাগর, আরবসাগর আর ভারত মহাসাগর– তিন সমুদ্রের মিলনস্থল এই ‘ত্রিবেণী সংগম’৷ এখানে স্পষ্ট দেখা যায়, তিন সমুদ্রের তিন রং- কালো, নীল আর সবুজ, একের পর এক এসে মিলেছে৷ এই মিলনস্থলের মাঝ বরাবর রয়েছে বিবেকানন্দ রক৷ এখানেই নাকি শিকাগো যাওয়ার আগে গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ৷ পরে এই পাথর ঘিরে তৈরি হয়েছে মন্দির, বিবেকানন্দের মিউজিয়াম৷ এছাড়াও এখানে রয়েছে মা কন্যাকুমারীর মন্দির, বেশ কিছু মিউজিয়াম৷ সমুদ্রের পাড়েই ইতি টানা এই কেরল সফরের৷ কন্যাকুমারী স্টেশন থেকে রওনা হাওড়ার দিকে৷
কীভাবে যাবেন:
হাওড়া থেকে এর্নাকুলাম৷ অথবা ফ্লাইটে কলকাতা থেকে কোচি৷ এর পর বাকি সফর গাড়িতে৷ সঙ্গে বেশি লোকজন থাকলে পাহাড়ি রাস্তায় ছোট ছোট বাসই সুবিধাজনক৷ শেষ গন্তব্য কন্যাকুমারী থেকে হাওড়া পর্যন্ত ট্রেন রয়েছে৷
কোথায় থাকবেন:
থাকার জন্য হোটেলের ব্যবস্থা আগে থেকে করে যাওয়া ভাল৷ সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ট্যুরিজম কোম্পানি হোটেল বুকিং-এর কাজ করে থাকে৷ তাছাড়া আজকাল বিভিন্ন ট্যুরিজম সাইট বা অ্যাপ থেকে সুবিধামতো হোটেল বেছে নেওয়া যায়৷

The post বর্ষায় ঈশ্বরের নিজের দেশে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement