সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ওয়াকফ বোর্ডের একচ্ছত্র রাজত্বে রাশ টানছে কেন্দ্র। আজ, বৃহস্পতিবার ওয়াকফ আইনে অন্তত ৪০টি সংশোধন করে লোকসভায় বিল পেশ করতে চলেছে মোদি সরকার। ওয়াকফ বোর্ডে মহিলা ও অমুসলিম সদস্যদের রাখার পাশাপাশি জমি দখলের অধিকারের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সংশোধন করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকেই ওয়াকফ বোর্ডের আইন সংশোধন নিয়ে আলোচনা হয়। দ্রুত বিলটি সংসদে পেশ করতে তৎপর ছিল কেন্দ্র। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতেই লোকসভার সকল সদস্যদের একটি খসড়া দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে সমস্ত প্রস্তাবের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। কী কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে ওয়াকফ অ্যাক্ট ১৯৯৫-এ?
[আরও পড়ুন: বিমায় জিএসটি নিয়ে অনড় কেন্দ্র! দায় এড়িয়ে বিরোধীদেরই দুষলেন নির্মলা]
এই আইনের ৪০টি সংশোধনীর মধ্যে রয়েছে ওয়াকফ বোর্ডের জমি দখলের অধিকারের বিষয়টি। বর্তমান আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডের দখল করা সম্পত্তি বা জমিতে কোনওরকম সরকারি পর্যালোচনা বা রিভিউ কিংবা মামলা করা যায় না। পর্যালোচনা ছাড়াই ওয়াকফ বোর্ড জমি দখল করতে পারে। কোনও সম্পত্তি নিয়ে ব্যক্তিগত মালিকানা এবং ওয়াকফ বোর্ডের আইনি বিবাদ চললেও তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না সরকার। এক্ষেত্রে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বিতর্কিত কোনও সম্পত্তির মালিকানা আদতে কার, তা খতিয়ে দেখার আইনি এক্তিয়ার নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্র।
ওয়াকফ বোর্ডে মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওয়াকফ কমিটিতে অন্তত দুজন মহিলা সদস্যকে রাখতে হবে। এছাড়া মুসলিমদের পাশাপাশি অমুসলিম সদস্যরাও থাকবেন বোর্ডে। যাঁদের মধ্যে হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের দুজন প্রাক্তন বিচারক, একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তিনজন সাংসদ, চারজন খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব-সহ সরকারের শীর্ষ কয়েকজন আধিকারিকদের নিয়ে ওয়াকফ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জমি বা সম্পত্তি ওয়াকফ হিসাবে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে নথিভুক্ত করতে হবে। অন্যদিকে, সম্পত্তির মালিকানার ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে মেয়েদের অধিকার যাতে খর্ব না হয় সেদিকে নজর রাখার কথাও বলা হয়েছে। নতুন সংশোধনী আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডের প্রাপ্ত অর্থ বিধবা, বিবাহবিচ্ছিন্ন ও অনাথদের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি নতুন বিলে ওয়াকফ অ্যাক্টের নাম সংশোধন করে 'ইউনাইটেড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট (এনপাওয়ারমেন্ট)' রাখার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
তবে এই নতুন বিল পাশ করানোর ক্ষেত্রে বেশ বেগ পেতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে। কারণ চব্বিশের নির্বাচনের যা ফলাফল তাতে লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বিজেপির। এবার তারা অনেকটাই শরিক নির্ভর। যার অন্যতম মুখ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ওয়াকফ সংশোধনী আইন পাশ হয়ে গেলে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক হারাবেন নীতীশ। পাশাপাশি নতুন এই আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন লোকসভায় এই বিলের বিরোধিতা করা হবে। তিনি দাবি করেন, 'এই সংশোধনী বিলটি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠিয়ে সংশোধন করা হোক। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই বিলের বিরোধিতা করব।'