সুকুমার সরকার ও সোমনাথ রায়, ঢাকা ও নয়াদিল্লি: দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে দেশে ফেরা নিয়ে আশার আলো উজ্জ্বল। বাংলাদেশের জেলবন্দি বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা বধূ সোনালি খাতুনের (Sonali Khatun) জামিন মঞ্জুর করেছে বাংলাদেশের আদালত। তাঁর সঙ্গে বন্দি বাকি পাঁচজনের জামিনও মঞ্জুর হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে। অন্যদিকে, জানা গিয়েছে, সোনালির বাবা-মা শনিবার ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম রয়েছে বলে দাবি করেছেন। ফলে সোনালি বিবি ও তাঁর স্বামীর ভারতে ফেরা নিয়ে সম্ভবত আর জটিলতা নেই।
দিল্লিতে কর্মরত সোনালি বিবি ও তাঁর স্বামী বাংলায় কথা বলায় তাঁদের 'বাংলাদেশি' তকমা দিয়ে গত জুন মাসে প্রথমে আটক করে দিল্লি পুলিশ। আটক করা হয় মোট ৬ জনকে। তাঁদের মধ্যে একজন শিশুও আছে, সে সোনালি বিবির সন্তান। পরে তাঁদের অসম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়। সেখানে ৮ বছরের বীরভূমের পাইকর গ্রামের এই পরিবারের তরফে এই পুশব্যাক নিয়ে মামলা দায়ের করে আদালতে। হাই কোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা বিচারাধীন। সোমবার এনিয়ে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত জানিয়েছেন, ''আমরা কোনও নির্দেশ দিচ্ছি না। আপনারা দেখুন মানবিকতার খাতিরে কী করা যেতে পারে।'' সোনালির বাবা বদু শেখের আইনজীবী আর্জি জানান, সোনালি খাতুনের ৮ বছরের ছেলে সঙ্গে রয়েছে, সেও জেলবন্দি। সরকার এই বিষয়টি বিবেচনা করার সময় যেন সেই নাবালকের কথাও মাথায় রাখে।
এদিকে, সোনালির বাবা-মা জানিয়েছেন, শনিবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম খুঁজে পেয়েছেন। সোনালির তরফে আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী নিশ্চিত করেছেন, সোনালির বাবা-মায়ের নাম বীরভূম জেলার মুরারাই বিধানসভা কেন্দ্রের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় পাওয়া গিয়েছে। পাইকর গ্রামের পাইকর প্রাথমিক বিদ্যালয়কে তাঁদের ভোটকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রঘুনাথবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সোনালি এবং তাঁর পরিবার এখনও বাড়ি ফিরতে পারেনি, এটা দুঃখজনক। অন্তঃসত্ত্বা সোনালির বিষয়টিও উদ্বেগের কারণ।’’ সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে সোনালি ও বাকি ৫ জনের জামিন মঞ্জুর হওয়ায় তিনি আরও দাবি করেন, এই নতুন তথ্য বন্দি দম্পতির মামলাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তাঁর মতে, সোনালির সন্তান যদি বাংলাদেশেও (Bangladesh) জন্মগ্রহণ করে, তাহলেও সে ‘বংশগতভাবে’ ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে।
সোনালির বাবা বদু শেখের বক্তব্য, ‘‘এখন আমাদের নাম তালিকায় পাওয়া গেছে। আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে এবং তার পরিবারকে ঘরে ফেরানোর জন্য আর কী লাগবে? কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ফেরানোর, এমনকী বাংলাদেশের একটি আদালতও তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এখনও কিছুই হয়নি।’’ মা জ্যোৎস্না বিবি মেয়ের স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে জেলে আমার মেয়ের কী ধরনের যত্ন হচ্ছে, আমরা জানি না। ও যেন ফিরে এসে ভারতেই সন্তান প্রসব করতে পারে, আমরা ওর জন্য খুবই চিন্তিত।’’
