ধীমান রায়, কাটোয়া: বাবার বয়স ৬৪ বছর! তাঁর দুই ছেলের মধ্যে একজনের বয়স ৬০ বছর! আর একজনের বয়স ৫৯ বছর! অর্থাৎ পাঁচ বছর বয়সেই দুই সন্তানের 'বাবা' হয়ে গিয়েছেন ওই ব্যক্তি। এসআইআর চলাকালীন ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় বয়স নিয়ে এমনই গরমিল ধরা পড়ার পর সরেজমিনে খতিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট বিধানসভার ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় ১৭৫ নম্বর অংশে ধরা পড়েছে দুই ভোটারের পিতৃপরিচয় নিয়ে এই অসামঞ্জস্য।
মঙ্গলকোট বিধানসভার ১৭৫ নম্বর অংশে শীতলগ্রামের দুই ভোটার সম্প্রতি এসআইআরের এনুমারেশন ফর্ম ফিলাপ করেছেন। ওই দুই ভোটারের নাম লক্ষ্মী মাঝি ও সাগর মাঝি। তাঁরা সম্পর্কে দুই ভাই। তাঁদের এনুমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজ করার সময়েই সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নজরে পড়ে লক্ষ্মী ও সাগরের 'পিতৃপরিচয়' নিয়ে। ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে ১৭৫ অংশে ক্রমিক নম্বর ৪৩৮ এ নাম রয়েছে লক্ষ্মী মাঝির। তাঁর বয়স ৬০ বছর। বাবার নাম উল্লেখ রয়েছে সরোজ মাঝি। এছাড়া ৪৪০ ক্রমিক নম্বরে নাম রয়েছে সাগর মাঝির। তাঁর বয়স ৬০ বছর বলে উল্লেখ। তাঁরও বাবার নাম সরোজ মাঝি।
ওই অংশেই ৪৩৭ নম্বর ক্রমিক নম্বরে সরোজ মাঝির নাম রয়েছে। বাবা ষষ্ঠিরাম মাঝি। সরোজ মাঝির বয়স ৬৪ বছর বলে উল্লেখ। উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় লক্ষ্মী ও সাগর দুই ভাইয়েরই নাম নেই। স্বভাবতই প্রবীণ বয়সেও ২০০২ তালিকায় নাম না থাকা এবং ওই দুজনের 'বাবা' সরোজ মাঝির বয়সের সঙ্গে দুজনের ৪-৫ বছর ফারাক থাকায় সন্দেহ হয় নির্বাচন কমিশনের। এরপরেই কমিশনের প্রতিনিধিরা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে যান। আধিকারিকদের জেরার মুখে অবশ্য লক্ষ্মী এবং সাগর দুজনেই স্বীকার করেছেন তাঁদের আসল বাবা সরোজ মাঝি নন। যদিও লক্ষ্মী ও সাগর দু'জনেই এনিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, ''ওই দুজনেই স্বীকার করেছেন তাঁরা একসময় বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন। আগে মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রামে থাকতেন। সেখানে আধার কার্ড, রেশন কার্ড তৈরি করাতে পারলেও ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারেননি। এরপর প্রায় ১৮-১৯ বছর আগে শীতলগ্রামে একজনকে বাবা সাজিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলেন।'' ওই আধিকারিকে কথায়, শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মী ও সাগরের নাম 'নো লিঙ্কেজ' দেখানো হয়েছে। এরপর ওই দুজনকে শুনানীতে ডাকা হবে। তাঁদের কাছে উপযুক্ত প্রমানাদি দেখার পর প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
