'মিতিন একটি খুনির সন্ধানে' মুক্তির আগে পরিচালক অরিন্দম শীলের একান্ত সাক্ষাৎকারে শম্পালী মৌলিক।
প্রায় দু’বছর পর আপনার পরিচালিত ছবি আসছে।
... হ্যাঁ, একটা বছর প্রায় চারটে ওটিটি করেছিলাম পর পর, তখন সিনেমা করা হয়নি। তারপর ‘মিতিন’-এর শুটিং চলতে চলতে অঘটন ঘটে। কোয়েলের হাত ভেঙে যায়। ছবি মুক্তির আনন্দ-ভয় সবটা নতুন করে পাচ্ছি। আই অ্যাম এনজয়িং।
এবারের ‘মিতিন’-এর মধ্যে নতুনত্ব কী?
...এই যে বলছেন, ‘মিতিন’ এটাই নতুনত্ব। ‘মিতিন মাসি’ নয়। এবার মিতিন পরিণত, এবার ‘মিতিন - একটি খুনির সন্ধানে’, নামেই বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে কতটা অ্যাগ্রেসিভ মিতিন। খুন সহজ জিনিস নয়, সেই খুন এবার একটা পরিবারের মধ্যে হয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলো সম্পর্ক জড়িয়ে। অর্থাৎ ছবিতে অনেকগুলো স্তর আছে। সেটা খুব ইন্টারেস্টিং। আরেকটা বিষয়, এই ছবিটা মিউজিক্যাল থ্রিলার। চারখানা গান আছে। অসাধারণ মিউজিক করেছে জিৎ (গঙ্গোপাধ্যায়)। সকলেই দারুণ গেয়েছে– শিল্পা রাও, রূপম ইসলাম, অরুণিতা কাঞ্জিলাল। ডেবিউতে পেয়েছি আরমান খান এবং চন্দনা চক্রবর্তীকে। চন্দনা বউদি, ওঁকে দিয়ে গাওয়াতে পেরেছি, খুব ভালো লাগছে। এত ভালো গেয়েছেন! ছবিতে গান এবং মিউজিক খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়েছে। টিজারেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। আর নতুনভাবে কলকাতাকে দেখা যাবে। তাই কলকাতার নয় এমন একজনকে দিলাম ক্যামেরার দায়িত্ব। ডিওপি অনুপ সিং আমাকে দারুণ সাহায্য করেছেন। ধন্যবাদ, প্রযোজক নিসপাল সিং রানেকেও। ছবির জন্য যা যা দরকার সব দিয়েছে।
ছবি: কৌশিক দত্ত
নানা ঘটনায় মিতিন-এর রিলিজ একটু দেরি করেই হচ্ছে। আক্ষেপ আছে?
...যেটা যে সময়ে হওয়ার, ঠিক তখনই হবে। আমার মনে হয় মিতিন দারুণ সময়ে রিলিজ হচ্ছে, যেটা হল বড়দিন। মানুষের উচ্ছ্বাস এবং হাইপ থেকে মনে হচ্ছে, আমাদের মতোই দর্শকও মুখিয়ে আছে।
বিগত দুটো বছরে বিভিন্ন সময়ে অনভিপ্রেত কারণে খবরের শিরোনামে এসেছেন। সেটার জন্য অনুতাপ বা খারাপ লাগা আছে?
...আমি জীবনের পজিটিভ দিক দেখতে পছন্দ করি। এবং সেটা কীভাবে আমার চলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে, সেটাকেই আমি উদযাপন করি।
ব্যক্তিগত খারাপলাগা কি আপনার ছবিতে প্রভাব ফেলতে পারে?
...একজন পরিচালক হিসাবে আমি অত্যন্ত ক্লিনিক্যাল। মনে করি যে, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনবোধও বদলাতে থাকে। জীবনবোধে আমরা আরেকটু সমৃদ্ধ হই। সেখান থেকে বলি, আমি পরিচালক হিসাবে যেটা পেয়েছি কসমসের থেকে, সেটা বহু মানুষ আজীবন কাল পরিচালক হতে চেয়েও পায় না। এই ইন্ডাস্ট্রিতে ৩৭ বছরে, তার একটা বড় অংশ অভিনেতা হিসেবে কাটিয়েছি। তার পর লাইন প্রোডিউসার, প্রযোজক ইত্যাদি হিসেবে কাজ করেছি। তার পর ৪৮ বছর বয়সে এসে পরিচালক হয়েছি। এবং ২০১২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে কুড়িটা ছবি করেছি, চারটে ওটিটি সিরিজ করেছি। আজীবন কাল ধরেও অনেকে করতে পারে না। এবং কুড়িটা ছবির মধ্যে নাইনটি ফাইভ পার্সেন্ট ছবি প্রযোজককে পয়সা ফেরত দিয়েছে। এটা আমি গর্বের সঙ্গে বলছি না। এটা বিনয়ের সঙ্গেই বলছি। আমার ভিতরে যদি কোথাও শুদ্ধতা না থাকে, সিনেমার প্রতি একশো শতাংশ প্যাশন ও সততা না থাকে, তা হলে সিনেমা আমাকে এটা দিতে পারে না। সিনেমা কিন্তু তঞ্চকতা পছন্দ করে না। সিনেমা তোমাকে তখনই দেবে, যখন সিনেমাকে তুমি অনেক বেশি কিছু দিতে পারবে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি পরিচালনায় আপনি বরাবরই দক্ষ। এই ‘মিতিন’ ফ্র্যাঞ্চাইজির ছবির মাধ্যমেই কি বড় পর্দায় ঘুরে দাঁড়াবেন?
...সেটা দর্শক বলবে, বক্স অফিস বলবে আর কিছুদিন পর। এ কথা ঠিক, মিতিনকে যে পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, তৃতীয় মিতিন আরও ক্ষুরধার, আকর্ষণীয়।
বড়দিনে শুধু মিতিন-ই নয়, ‘প্রজাপতি টু’, ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’-ও আসবে। তিনটি বাংলা ছবির লড়াই।
...এ তো লড়াই নয়, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। সেই ভাবেই দেখি। আমার ছবি যখন মুক্তি পায়, আশেপাশে কী ঘটে দেখতে চাই না। কাজের সময়েও তেমন আমি। সিনেমাটাই প্রাধান্য পায়। এ ক্ষেত্রে একটাই কথা বলব, আমাদের ফেডারেশন এবং সরকারি হস্তক্ষেপে যে সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কমিটি তৈরি করা হয়েছে, সেই কমিটি থেকে পরিচালক, প্রযোজক সকলে রয়েছে। সেখানে ঠিক হয়েছে যে প্রাইম টাইমে তিনটে করে বাংলা ছবি রিলিজ হবে। আমি সেই সময় থেকে ছবি করছি, যখন সাতটা-আটটা ছবির সঙ্গে আমার ছবি লড়াই করেছে। ‘বাহুবলী’-র সঙ্গে আমার ছবি লড়েছে। সেইগুলো লড়াই ছিল আমার কাছে। এইটাকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই বলব, পজিটিভ অ্যাপ্রোচ নেওয়া হয়েছে। বাংলা ছবির যা স্পেস আছে, সেখানে তিনটে ভিন্নধর্মী বাংলা ছবি ভালো ভাবে জায়গা করতে পারবে। কনটেন্ট যদি ভালো হয়, প্রত্যেকে দর্শকের মধ্যে স্থান করে নেবে।
অভিনেতা অরিন্দম শীলের খবর কী?
...লাস্ট মিতিন-এ অভিনয় করেছিলাম। ‘কর্পূর’-এ অভিনয় করেছি।
কিন্তু অন্য পরিচালকদের থেকে ডাক আসছে না?
...দু-একটা অফার এসেছে। সেটা করবও। এক্ষুনি বলা হয়তো ঠিক হবে না। একটা ঐতিহাসিক চরিত্রের অফার এসেছে। পরিচালক ঘোষণা না করলে এক্ষুনি বলতে পারছি না। আমি খুব ইচ্ছুক। ভালো চরিত্রের জন্য মুখিয়ে থাকি। কোথাও একটা মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে, অরিন্দম আর অভিনয় করবে না, শুধুই পরিচালনা করবে। আমি কাজের ক্ষেত্রে খুবই খুঁতখুঁতে মানুষ, অভিনয় করতে গেলেও সেই ডিসিপ্লিন প্রয়োজন। সেইরকম জায়গা না পেলে কাজ করতে পারব না।
‘কিফ’-এ দেখলাম শান্তনু মৈত্রর সঙ্গে আপনার সেশন এবং দারুণ সম্পর্ক। কাজ হবে একসঙ্গে?
...হলে হবে (হাসি)। দীর্ঘদিন ধরে কথা হয়েছে তবে তাকে ঠিক বিষয়টা, যোগ্য জায়গাটা দিতে হবে।
‘কর্পূর’-এর স্টেটাস কী?
...জোরকদমে কাজ চলছে পোস্ট প্রোডাকশনের। ফেব্রুয়ারি টার্গেট। আপাতত ফোকাস মিতিনে। ক্রিসমাসে ছবি আসছে। লেটস সেলিব্রেট।
শেষ দুটো বছর আপনাকে কী শেখাল?
...আই টেক লাইফ ওয়ান বাই ওয়ান অ্যাজ ইট কামস। জীবনের প্রতিটা বছর নতুন করে কিছু না কিছু শেখায়। একটা অভিজ্ঞতা, জীবনের মোড় আমাদের ঋদ্ধ করে। ইতিবাচক এবং অ্যাগ্রেসিভ ভাবেই জীবনকে নিই।
