shono
Advertisement
Sunil Narine

উইকেট পেলে বা জয়ের পরও কেন সেলিব্রেট করেন না নারিন? নেপথ্যে বাবার 'মন্ত্র'

নির্বিকার 'পারসেপশনে'র জন্যই কি নাইট অধিনায়ক হওয়া হল না নারিনের?
Published By: Subhajit MandalPosted: 02:28 PM May 03, 2025Updated: 02:28 PM May 03, 2025

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: ইংরেজিতে একটা প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে যে, 'ডোন্ট জাজ আ বুক বাই ইটস কভার'। যার মর্মার্থ হল, মানুষের মুখ দেখে বিচার করতে যেও না, সে ভেতরে-ভেতরে কেমন? কে জানত, কেকেআরের সুনীল নারিনের ক্ষেত্রে এ হেন ইংরেজি আপ্তবাক্য বর্ণে-বর্ণে প্রযোজ্য হয়ে পড়বে!

Advertisement

চোদ্দো বছর হয়ে গেল আইপিএল জগতে পূর্ণ মহিমায় বিচরণ করছেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। এবং বিগত চোদ্দো বছরে তাঁকে নিয়ে কম 'রসিকতা' হয়নি। অধুনা মিম-প্রজন্মে যা আরও বেড়েছে। বিষয় একটাই- নারিন ও তাঁর অপার ঔদাসীন্য। যিনি সাফল্যে যা, ব্যর্থতাতেও তা। উত্থানেও যা, পতনেও তাই। সর্বত্র তিনি সমান নির্বিকার। কিছুতেই যাঁর কিছু যায়-আসে না। কৌতুকপ্রিয় নাইট সমর্থকরা মজা করে এ-ও বলতেন যে, কেকেআরে সবচেয়ে কম কে হেসেছেন, তা নিয়ে গৌতম গম্ভীর আর সুনীল নারিনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলতে পারে!
অথচ মজার হল, সুনীল নারিন আদতে সম্পূর্ণ উল্টো। পরিপূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ। তিনি দারুণ নাচেন। হুল্লোড় করতে জানেন। অসম্ভব ভালো ক্রিকেটবোধ। খেলার বাইরেও বিবিধ বিষয়ে অপার জ্ঞান। সঙ্গে দুর্ধর্ষ স্মৃতিশক্তি। ২০১১ সাল থেকে আইপিএলে আজ পর্যন্ত কোন ম্যাচে কী করেছেন, গড়গড়িয়ে বলে যেতে পারেন নারিন। শোনা গেল, ইডেনে দিন কয়েক পূর্বে গুজরাত টাইটান্স বনাম কেকেআর ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করা শুভমান গিলকে নাকি খেলা শেষে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ইডেনে তাঁর কত নম্বর হাফসেঞ্চুরি হল? মনে করে সঠিক সংখ্যাটা বলতে পারেননি শুভমান। পাশে দাঁড়ানো নারিন নাকি তখন ঝটিতি উত্তরটা দিয়ে দেন!

কেকেআরের কেউ কেউ এ দিন দুঃখ করে বলছিলেন যে, 'পারসেপশন' শব্দটাই নারিনের ক্ষেত্রে কাল হয়ে গেল। লোকে ধরেই নিয়েছে যে, নারিন অল্প কথার মানুষ। স্বভাব-গম্ভীর প্রকৃতির। এমনকী সংসারে নতুন আগত ক্রিকেটাররাও নারিনের সঙ্গে কথা বলা উচিত হবে কি না, বুঝতে পারেন না। নাইট ছাউনি থেকে এ-ও বলা হল, কেউ খোঁজও রাখেন না ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার উইকেট নিলে উৎসব করেন না কেন? শুনলাম, নেপথ্য কারণ নারিনের পিতা। যিনি নাকি ছেলেকে বলেছিলেন যে, তুমি আজ যে ব্যাটারের উইকেট নিয়ে উৎসব করবে, সে যে কাল তোমার বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাত করবে না, কী করে জানছো? তখন তুমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে কী করে? শোনা গেল, নারিনকে নাকি তাঁর ঘনিষ্ঠ একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, কেরিয়ারের শেষ ম্যাচে উইকেট নিলে উৎসব করবেন কি না? কারণ, তার পর তো আর প্রতিপক্ষ ব্যাটারের সঙ্গে মাঠে সাক্ষাতের সম্ভাবনা নেই। সহাস্য নারিন নাকি উত্তর দেন, "কমেন্ট্রি বক্সে দেখা হবে না, গ্যারান্টি আছে?"

দেখতে গেলে, নেতা নারিনকেও ভুগিয়েছে তাঁকে ঘিরে জলীয় বাষ্পের মতো তৈরি হওয়া 'পারসেপশন'। জনপ্রিয় জনমত। ক্যাপ্টেন গম্ভীর চলে যাওয়ার পর মাঝের একটা সময় অধিনায়ক নির্বাচন নিয়ে ভুগেছে কেকেআর। অথচ নারিন ছিলেন। বিগত চোদ্দো বছর ধরে কেকেআরের পৃথিবীজোড়া বিবিধ ফ্র্যাঞ্চাইজি জুড়ে আছেন, খেলেছেন। আবু ধাবি নাইট রাইডার্স ইত্যাদিতে অধিনায়কত্বও করেছেন তিনি। কিন্তু আইপিএলের মতো বিশ্বশ্রেষ্ঠ টুর্নামেন্টেও যে তিনি দাপুটে অধিনায়কত্ব করতে পারেন, পূর্বে ভাবা যায়নি। দেখাই হয়নি কখনও।
অথচ দিন কয়েক আগে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে কেকেআরের দিল্লি-বধের মহানায়ক একজনই। সুনীল নারিন। ব্যাটিংয়ে। ফিল্ডিংয়ে (কেএল রাহুলকে সে দিন ডিরেক্ট থ্রোয়ে রান আউট করেন)। অধিনায়কত্বে। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন নাইট অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে। সহ-অধিনায়ক ভেঙ্কটেশ আইয়ারও মাঠে ছিলেন না। কারণ, তাঁকে তুলে নিয়েই 'ইমপ্যাক্ট সাব' নামানো হয়। সেই সময়, কেকেআরের জীবন-মৃত্যুর ম্যাচে, জেগে ওঠেন ভয়াল নারিন। শুধুমাত্র স্পিন-বিষে বিপক্ষকে ঘায়েল করে দেওয়া নয়, তুখোড় ক্যাপ্টেন্সিও করে যান। তাঁর ফিল্ড প্লেসিং, বোলিং চেঞ্জ কোটলায় দর্শনীয় ছিল।

হাতের চোট নতুন জটিলতা না সৃষ্টি করলে আগামী রোববার ইডেনে কেকেআর অধিনায়ক হিসেবে অজিঙ্ক রাহানেই থাকছেন। ঘোর অফ ফর্মে থাকলেও ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে খেলানো হবে। অতএব, নেতৃত্ব জনিত ঝঞ্ঝাট হবে না। নারিনও ফিরে যাবেন, ব্যাটিং-বোলিংয়ের পরিচিত ভূমিকায়। কিন্তু কেকেআর, তার সমর্থকুল, মুখে স্বীকার না করলেও একটা কথা তাঁরা জানবেন। এবং অধিনায়ক নারিনকে নিয়ে অধুনা বহু ব্যবহৃত আর এক ইংরেজি বাক্য তাঁদের নির্ঘাৎ মনে পড়বে। 'ইন দ্য সার্চ অফ গোল্ড, উই লস্ট আ ডায়মন্ড!'

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • চোদ্দো বছর হয়ে গেল আইপিএল জগতে পূর্ণ মহিমায় বিচরণ করছেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার।
  • বিগত চোদ্দো বছরে তাঁকে নিয়ে কম 'রসিকতা' হয়নি।
  • কৌতুকপ্রিয় নাইট সমর্থকরা মজা করে এ-ও বলতেন যে, কেকেআরে সবচেয়ে কম কে হেসেছেন, তা নিয়ে গৌতম গম্ভীর আর সুনীল নারিনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলতে পারে!
Advertisement