বাজেট যখনই নতুন কিছু মেলে ধরতে পারে না দেশবাসীর সামনে, তখনই বাজেট পেশে ভাষার জটিলতা বাড়ে। এক্ষেত্রেও যেমন ঘটছে। বৈষম্য যে সবসময়ই আমাদের দেশে ঊর্ধ্বমুখী, তা কখনওই স্পষ্ট করে বাজেটে বলা হয় না। এবারেও যথারীতি তা ঘটেনি। লিখছেন সুগত মারজিৎ।
বাজেট থেকে চমকপ্রদ কিছু এবার আশা করিনি। কারণ, ভোট হয়ে গিয়েছে। গিমিকের প্রয়োজন
আর নেই। তবে, কতকগুলো বিষয় বোঝা গেল। যেমন, নিয়োগ ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
আবার, এমপ্লয়ার্স প্রভিডেন্ট ফান্ডেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থানে গতি আনার জন্যই এই ব্যবস্থা, তা স্পষ্ট। ফলে, এটিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবেই দেখতে হবে। কিন্তু ভর্তুকি ভারতে সবসময়ই কাজ করেছে, এমন নয়। আর এর ফলাফল কী হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত সমীক্ষা বা পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন হয়, বাজেটে সেই পরিসরই থাকে না। আসলে কেউ ব্যর্থতা দেখাতে চায় না।অ্যাসেটের উপর ‘লং টার্ম ক্যাপিটাল গেন ট্যাক্স’-এর হার বাড়ানো হল। এর ফলে পুরনো বাড়ি-বিক্রেতাদের মুশকিলে পড়তে হবে।
সেক্ষেত্রে, নতুন বাড়ি বিক্রির কিছুটা সুবিধা বাড়বে। সেই অর্থে, রিয়েল এস্টেট সেক্টরে কিছুটা আলো দেখা যাবে হয়তো। কৃষিক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার ফল কী হবে, বলা কঠিন। কৃষককুল কি উপকৃত হবে? ভারতে প্রকৃতি স্বভাবত অত্যন্ত প্রসন্ন বলে এখনও ৪০ শতাংশ জমি নিশ্চিত উৎস থেকে জল পায়। সাম্প্রতিকে বড় ধরনের খরা, বিরাট বন্যার মুখোমুখি আমরা হইনি। তাই এর গুরুত্ব বুঝতে পারি না। কিন্তু একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলেই যে কী হবে, তা ভাবলেই আতঙ্ক হয়। আয়কর কাঠামোর বদল খুব চরমপন্থী নয়। রাজস্ব ঘাটতিও প্রায় সীমান্তে দাঁড়িয়ে। দরিদ্র মানুষদের যে-প্রকল্প, তা কিন্তু রাজ্যভিত্তিক প্রক্রিয়ায় এখন অনেক বেশি হয়।
[আরও পড়ুন: ‘তুমি মহিলা, কিস্যু বোঝ না’, বিহার বিধানসভায় নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করে বিতর্কে নীতীশ]
কেন্দ্রীয় সরকারের বেশি কিছু করার নেই। ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনও প্রকল্প এই মুহূর্তে কেন্দ্রের হাতেও নেই। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর দেখাদেখি বেশ কিছু প্রকল্প যেমন নেওয়া হচ্ছে অন্য রাজ্যে। অবশ্যই ‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম’ বা সর্বজনীন ন্যূনতম আয় নয়, কিন্তু মহিলারা হাতে অর্থ
পাচ্ছেন। এই যে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে লক্ষ্যমাত্রা করে তাদের আয় বাড়ানো– এটা রাজ্যে রাজ্যে হালে অনেক বেশি হচ্ছে।
বাজেট যখনই নতুন কিছু মেলে ধরতে পারে না দেশবাসীর সামনে, তখনই বাজেট-পেশে ভাষার জটিলতা বাড়ে। এক্ষেত্রেও যেমন ঘটছে। বৈষম্য যে সবসময়ই আমাদের দেশে ঊর্ধ্বমুখী, তা কখনওই স্পষ্ট করে বাজেটে বলা হয় না। এবারেও যথারীতি তা ঘটেনি। অর্থনৈতিক সমীক্ষাতেও এখন এড়িয়ে যাওয়া হয়। ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ বা দক্ষতার উন্নতির কথা যে বাজেটে বলা হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তো পাশ করা ছেলেমেয়েরা চাকরি পাচ্ছেন না। কাজেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে কে ভাববে, সেই প্রশ্নও উঠে আসে।
আগামী অর্থবর্ষে পরিকাঠামো খাতে নাকি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৩.৪ শতাংশ বিনিয়োগ করা হবে। কিন্তু এতে কিচ্ছু বোঝা যায় না। সরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত, বিশ্ব ব্যাঙ্কের নথিমাফিক হয় স্থিতিশীল, নয়তো কমছে ক্রমশ। তা না বাড়লে এই বিনিয়োগের হিসাব আশার আলো দেখাবে না।
অনুলিখিত
মতামত নিজস্ব