সুখের সূচকে ভারতের স্থান ১১৮। দেখা গিয়েছে, আমাদের দেশে ইদানীং সবচেয়ে বেশি অভাববোধ স্বাধীনতার। রাষ্ট্র নিরুত্তাপ।

বিশ্বের কোন দেশ কত ‘সুখী’, সেই সংক্রান্ত রাষ্ট্র সংঘের শাখা সংগঠনের এই বছরের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধে্যই অালোচনা ও বিতর্ক তুঙ্গে। গত সাত বছরের মতো এবারও বিশ্বের ‘সুখী’ দেশের তালিকা-শীর্ষে ফিনল্যান্ড। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তালিকার প্রথম পঁাচটি স্থানই নর্ডিক দেশগুলির দখলে।
কোন দেশের মানুষ কতটা ‘সুখী’ সেই সূচক তৈরির ক্ষেত্রে যে-বিষয়গুলি দেখা হয় তা হল– মাথাপিছু অায়, সামাজিক সুরক্ষা, গড় অায়ু, স্বাধীনতা, দেশবাসীর দান করার প্রবণতা, এবং দুর্নীতি সংক্রান্ত ভাবমূর্তি। সূচকটির মান নির্ধারণের অাগে সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকদের উপর সমীক্ষা চালানো হয়। নর্ডিক দেশগুলির ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা সুখের সূচকে উপরের দিকে থাকার একটি বড় কারণ। তালিকায় এ-বছর অনেকটা নিচে নেমে গিয়েছে অামেরিকা।
অামেরিকার স্থান এবার ২৪। সুখী দেশের তালিকায় অামেরিকার নিচে নেমে যাওয়ার প্রধানতম কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে একাকীত্ব। মাথাপিছু অায়, গড় অায়ু, উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ইত্যাদি বৈষয়িক ক্ষেত্রে অামেরিকার এগিয়ে থাকা নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু একাকীত্ব, সমাজ ও পারিবারিক সুরক্ষার কাঠামো দুর্বল হয়ে যাওয়া সুখের সূচকে ক্রমশ নিচের দিকে ঠেলে দিচ্ছে অামেরিকাকে। একই কথা সত্য ব্রিটেনের ক্ষেত্রেও। সূচকের তালিকায় তাদের স্থান অামেরিকার এক ধাপ অাগে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অামেরিকা এবং ব্রিটেনেও তরুণ প্রজন্ম প্রবল একাকীত্ব ও অনিশ্চয়তায় ভুগছে। তাদের মধে্য কাজ হারানোর অাতঙ্ক রয়েছে। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অাগের তুলনায় অনেক বেশি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে তারা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এবার তালিকার প্রথম দশে চলে এসেছে পুয়ের্তো রিকো এবং মেক্সিকো। এই দু’টি দেশের তরুণ প্রজন্ম নিজেদের দেশের অর্থনীতি নিয়ে অত্যন্ত অাশাবাদ ব্যক্ত করছে।
লাগাতার যুদ্ধ ও জঙ্গি হামলার মধে্য দঁাড়িয়েও সুখের সূচকে অাট নম্বরে দঁাড়িয়ে ইজরায়েল। ইজরায়েলিরা তাদের দেশে পরিবারের মতো থাকে। চাকরি, রোজগার, বাসস্থান ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে হয় না। সব দায়িত্ব সরকারের। যুদ্ধের মধে্য বাস করেও এই একটি কারণে ইজরায়েলিরা সুখের সূচকে এগিয়ে।
সূচকের তালিকায় ভারতের স্থান ১১৮। জনবহুল ভারতে মানুষের একাকিত্ব কম। ভারতে পরিবার প্রথা এখনও সুদৃঢ়। সম্প্রদায়ের ধারণাও জোরালো। কিন্তু কম মাথাপিছু অায় থেকে শুরু করে শিক্ষা-স্বাস্থে্যর দুর্বল পরিকাঠামো, অার্থিক বৈষম্য, রোজগারের অনিশ্চয়তা ইত্যাদি ভারতবাসীকে অসুখী রেখেছে। উদ্বেগের কারণ হল– এই সুখের অভাব ভারতবাসীর বাড়ছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ভারতবাসী ইদানীং সবচেয়ে বেশি অভাববোধ করছে স্বাধীনতারও। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের নিজেদের মতপ্রকাশ করার স্বাধীনতা নাকি আমাদের দেশে ক্রমশ কমছে। সরকারের নজরে কি পড়ছে এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটি?