মধুছন্দা মিত্র ঘোষ: প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও বিশালতা বারে বারেই বিবশ করে৷ গা এলিয়ে দেয় অনাবিল স্নিগ্ধতায়৷ স্নিগ্ধতার এই মুগ্ধতা নিয়েই আরব সাগরের কোঙ্কণ উপকূলের দক্ষিণ প্রান্তে মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতে দণ্ডায়মান গণপতিপুলে৷
ঐতিহ্য –
চারশো বছরের প্রাচীন স্বয়ম্ভু দেবতা গণপতি থেকেই এসেছে এই স্থানটির নাম৷ ‘পুলে’ মানে বেলাভূমি৷ পাহাড়ের পাদদেশে মন্দির৷ কথিত আছে স্থানীয় কোনও উপজাতি মহিলার অসঙ্গত আচরণে গণপতিবাপ্পা রাগান্বিত হয়ে নিজ বাসগৃহ থেকে সামান্য দূরে এই স্থানে এসে অধিষ্ঠিত হন৷ ভক্তদের ভিড়ে সদাই ব্যস্ত মন্দির প্রাঙ্গণ৷ বেশ খানিকটা জায়গাজুড়ে মন্দিরাঞ্চল৷ প্রধান ফটক ছাড়া সাগরপানেও একটা দ্বার আছে৷ যেখানে ভারতীয় সব হিন্দু মন্দিরই সাধারণত পূবমুখী, সেখানে এই মন্দিরের গণপতি মূর্তি পশ্চিমমুখী৷ গণপতিবাপ্পা সমুদ্রের দিকে মুখ করে অধিষ্ঠিত আছেন৷ প্রথামত ভক্তরা পুরো মন্দির ও প্রায় একশো মিটার উঁচু পাহাড়ি অধিত্যকা-পুরো প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করেন৷
এছাড়া কী দেখবেন –
- প্রায় শ’খানেক বাড়িঘর নিয়ে সবুজে ছাওয়া ছোট্ট সৈকত এলাকা গণপতিপুলে৷
- শান্ত নিরালা প্রকৃতির সঙ্গে সোনালি সৈকত ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলের স্পর্শে গণপতিপুলের নিসর্গ রূপের বৈভবকে অনন্য করে তুলে ধরে৷
- কাছেই রয়েছে রত্নগিরির রম্যতা৷ পাহাড়স্থলির সবুজের বুননে ছেয়ে থাকা পশ্চিমঘাট৷ পশ্চিমে অতলান্ত আরবসাগর৷
- ভারতীয় স্বতন্ত্রতা সংগ্রামী বালগঙ্গাধর তিলক-এর জন্মভূমি রত্নগিরি৷ লোকমান্য তিলক স্মারক ভবনটি রত্নগিরির আরও এক দ্রষ্টব্যস্থান৷
- কৃষিনির্ভর রত্নগিরির আভিজাত্য উপভোগ করতে করতেই পৌঁছে যেতে পারেন গণপতিপুলে সৈকত গ্রামে৷
- অতীতের মহান গৌরব বহন করে চলেছে রত্নগিরি তালুক৷ মহাভারতে উল্লেখ আছে, পাণ্ডব ভ্রাতারা তাঁদের ১৩ বছরের পরিব্রাজক যাত্রা শেষে এই স্থানে এসেছিলেন৷
- রত্নগিরিতে সৈকত ছাড়াও আরও তিনটি প্রধান দ্রষ্টব্য আছে৷ যেমন বার্মা নৃপতি থিবা প্রাসাদ৷ যেখানে বার্মার শেষ নৃপতি থিবাকে ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ সরকার কারারুদ্ধ করে রেখেছিল৷
- নিচে ভগবতী মন্দির ও ভগবতী বন্দর৷
কোথায় থাকবেন –
অক্টোবর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জলবায়ু খুব সুন্দর৷ মাঘ চতুর্থীতে গৌরী-গণপতি উৎসব এখানে দেখার মতো দুটি প্রধান উৎসব৷ গণপতিপুলের ‘অঙ্গার-কি-চতুর্ভেথী উৎসবটিও দেখবার মতো৷ সেই সময়টুকুই বলতে গেলে গণপতিপুলের পিক সিজন৷
অনেক হোটেল, রিসর্ট, লজ রয়েছে এখানে৷ অনেকগুলি বিচ রিসর্ট থেকেই সাগরসৈকত দেখা যায়৷ তবে মহারাষ্ট্র সরকারের এমটিডিসি রিসর্ট-এর কোঙ্কণি হাউসে অন্তত দুটো তিনটে দিন থাকাটা বেশ দারুণ ব্যাপার৷
কীভাবে যাবেন –
- সড়ক পথে গেলে মুম্বই-গোয়া রোড হয়ে নিভালি গ্রাম৷ সেখান থেকে ডান দিকে ৩২ কিলোমিটার গেলেই মিলবে গণপতিপুলে৷
- ট্রেনে গেলে রত্নাগিরি ও কার্বুদে স্টেশনে নামতে হবে৷ সেখান থেকে স্টেট ট্রান্সপোর্টের বাস মিলবে৷
The post যে সৈকতে বিরাজ করেন স্বয়ং ভগবান appeared first on Sangbad Pratidin.