shono
Advertisement
Dhumketu review

দেব-শুভশ্রীর প্রেম-যন্ত্রণা থেকে অনস্ক্রিন চুমু! পাহাড়ি প্রেক্ষাপটে লার্জার দ্যান লাইফ 'ধূমকেতু'

কেমন হল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত সিনেমা? রইল রিভিউ
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 07:14 PM Aug 14, 2025Updated: 12:43 PM Aug 15, 2025

শম্পালী মৌলিক: এই ছবির রিভিউ লেখা শক্ত। মাল্টিপ্লেক্সেও যে পরিমাণ উৎসাহ-প্লাবন দেখলাম সকাল থেকে বেলা অবধি– সংলাপ পর্যন্ত সেই স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। সাধারণত, সিঙ্গল স্ক্রিনে এমন হইহই দেখে থাকি। ফলত, সিনেম্যাটিক ব্রিলিয়ান্স নিয়ে কেউ ভাবিত নয়, আবেগটাই মুখ‌্য এখানে। আমার দু’পাশের আসনে দুই যুগল। জানলাম কোনওকালেই তাঁরা সকাল নটা বা এগারোটায় বাংলা ছবি দেখতে আসেন না। এসেছেন দেব-শুভশ্রীর প্রত্যাবর্তন-ছবির অভিজ্ঞতা নিতে। এমন অনুরাগীরা একটা আসনও ফাঁকা রাখেননি। এখন প্রশ্ন, কী দিল ‘ধূমকেতু’? আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে গেল ১০ বছর আগে। তখন দেবের ‘বুনোহাঁস’ করা হয়ে গিয়েছে। আপ্রাণ চেষ্টা করছেন নিজের কমফর্ট জোন থেকে বেরনোর। বাণিজ্যিক ধারার পাশাপাশি মধ‌্যপথের ছবিতে ছাপ রাখতে চাইছেন। এটা সেই সময়, যখন কেউ ভাবতে পারত না, দেব কৌশিক গঙ্গোপাধ‌্যায়ের ছবির নায়ক হবেন। বা কৌশিকের ঘরানায় পাল তুলবে শুভশ্রী-দেবের রোম্যান্স! বাংলা সিনেমার তেমন এক সন্ধিক্ষণের ছবি 'ধূমকেতু', ফলে গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

মুক্তিতে দেরি হল। বিলম্ব উপহার দিল দেবের স্পষ্টতর উচ্চারণ। হ্যাঁ, ডাবিংয়ে যত্ন নিয়েছেন দেব দশ বছর আগের 'ভানু' হয়ে উঠতে, সে তরুণ কিংবা বৃদ্ধ। ছবির নামের সার্থকতা হল, 'ধূমকেতু'র মতোই হাজির হয় ভানু (দেব), বন্ধু যোগেশের (রুদ্র) কাছে। তারপর ফ্ল্যাশব্যাক আর ফ্ল্যাশের ফরোয়ার্ডে ছবি এগোয়। ভালোবাসার ছবি, অন্ধকারের মাঝে আলো খোঁজার ছবি, ভালোবাসা হারানোরও এ ছবি। বিষয়গত ভাবে এখনও প্রাসঙ্গিক। পাহাড়ি অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে চিত্রনাট্য। ভানু মোহনগঞ্জের ছেলে। একটা ঝামেলায় তার ভাই রবি খুন হয়ে গিয়েছিল আর ভানু কোনওক্রমে পালিয়ে গিয়েছিল। সেও প্রায় চার বছর হয়ে গিয়েছে। এমন সময়ে ভানুর প্রত্যাবর্তন ঘটে। চিফ (চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী) তাকে পাঠিয়েছে বড় দায়িত্ব দিয়ে। ছোটবেলার বন্ধুত্ব, অতীত, প্রেম, পরিবার সব কিছু থেকে সে উৎখাত হয়েছিল কীভাবে– একটু একটু করে সামনে আসে তার অতীতের ছায়াপথ। স্ত্রী রূপা (শুভশ্রী) তাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেনি। শ্বশুর-শাশুড়ি (দুলাল লাহিড়ী-অলোকনন্দা রায়) আর ছোট্ট কন্যা তিতলিকে নিয়ে তার পৃথিবী। সন্তানহারা বাবা-মাও পুত্রবধূ আর ছেলেদের স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাল্যবন্ধু যোগেশের কাছে ভানু আসে। তারপর ভানুর অন্বেষণ এবং কী কী হয় ছবিতে দেখার।

ছবিটা লার্জার দ্যান লাইফ বটেই। শিমলা-নৈনিতালের প্রকৃতিতে বড় ক‌্যানভাস ধরেছেন পরিচালক কৌশিক। ডিওপি সৌমিক হালদার ভালোই দায়িত্ব সামলেছেন। এই ছবিতে দেশপ্রেম, সন্ত্রাস বিষয়গুলো এলেও ছবিটা যতখানি প্রেমের, যন্ত্রণার, ঠিক ততখানি বন্ধুত্বের ছবি। তবে বলতেই হয় ‘ধূমকেতু’ কৌশিক গঙ্গোপাধ‌্যায়ের সেরা ছবিগুলোর মধ্যে আসে না। চমৎকার কিছু সংলাপ থাকলেও গল্পটা অত জোরালো নয়। এবার আসা যাক দেব-শুভশ্রী প্রসঙ্গে, দশ বছর আগে যখন তাঁরা এই ছবি করেছেন, তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তবু পর্দায় তাঁদের আজন্মের প্রেমিক-প্রেমিকা মনে হয়। সাইকেল হাঁটিয়ে সেই পাড়াতুতো প্রেমের দিন মনে করালেন তাঁরা। আর চুমু? তার জন্য তো প্রেক্ষাগৃহে যেতে হবে! দেব-শুভশ্রী দুজনেরই স্ক্রিন প্রেজেন্সে কম বয়সের সারল্য লেগে আছে যা বড় নস্ট্যালজিক। দেবের বৃদ্ধ বয়সের চরিত্রায়ণে প্রস্থেটিক মেক-আপের অবদান থাকলেও শরীরী ভাষাতে দেব বেশ সাবলীল। তবে বারবার মুখোশের মতো খোলা-পরা চোখে লাগে। আর বন্ধুর চরিত্রে বাজিমাত করেছেন রুদ্রনীল ঘোষ। অতি-অভিনয়ের প্রবণতা থাকলেও তাঁর অন‌্যতম সেরা কাজ ‘ধূমকেতু’। একটি বিশেষ চরিত্রে পরমব্রত যখন ভানুর মুখোমুখি, কেবল চোখের চাওয়ায় মাত করেছেন। দেবের বাবার চরিত্রে দুলাল লাহিড়ী যথাযথ। চারটি গান ছবিতে। ভালো লাগে অরিজিৎ সিং ও শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে ‘গানে গানে’ আর অনুপম রায়ের গাওয়া ‘মা’ গানটা ছবির ওই সময়ের মেজাজের সঙ্গে অত‌্যন্ত মানানসই। সব মিলিয়ে ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হয়, জীবন পুরনো প্রেমের নতুন গান লিখতে পারে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বিলম্ব উপহার দিল দেবের স্পষ্টতর উচ্চারণ।
  • এই ছবিতে দেশপ্রেম, সন্ত্রাস বিষয়গুলো এলেও ছবিটা যতখানি প্রেমের, যন্ত্রণার, ঠিক ততখানি বন্ধুত্বের ছবি।
  • তবে বলতেই হয় ‘ধূমকেতু’ কৌশিক গঙ্গোপাধ‌্যায়ের সেরা ছবিগুলোর মধ্যে আসে না।
Advertisement