শম্পালী মৌলিক: ইদানীংকালে হরর-থ্রিলার ঘরানার ছবি বা সুপারন্যাচারাল সিরিজ মানুষ বেশি দেখছেন, সাম্প্রতিক তথ্য তাই বলে। মৈনাক ভৌমিকের নতুন ছবি 'বাৎসরিক' প্রাথমিকভাবে হরর জনার-এর, একই সঙ্গে বলা চলে, সম্পর্কের ছবিও বটে। তাঁর আগের ছবি ছিল ‘গৃহস্থ’। সেটিও মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার ধাঁচের ছিল। মনে হয়, পরিচালকের মনোযোগ এখন থ্রিলার বা ভয়ের গল্পের দিকে। ‘বাৎসরিক’ শতাব্দী রায়ের প্রত্যাবর্তন ছবি। ফলে তা নিয়ে দর্শকের আগ্রহ ছিল। তিনি নিরাশ করেননি।
এই ছবির মূল চরিত্র দু’জন নারী। একজন তার স্বামীকে হারিয়েছে, অন্যজন তার ভাইকে। ননদ আর ভাইয়ের বউয়ের সম্পর্ক ছবির কেন্দ্রে। তার মধ্যেই চলে আসে ভূত-প্রেত-পিশাচ ইত্যাদি। তবে ছবির অন্তরের বার্তাটি খানিক এইরকম যে- প্রিয়জনের মৃত্যু হলে সেই শোক আঁকড়ে বসে থাকা নয়, তাকে মনের মধ্যে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। শোক যদি চলার পথে পায়ের শিকল হয়ে দাঁড়ায়, মন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অলৌকিকের প্রতি বিশ্বাস তত বাড়ে। গল্পে দেখা যায়, ননদ স্বপ্না (শতাব্দী রায়) শিক্ষিকা আর ভাইয়ের বউ বৃষ্টি (ঋতাভরী চক্রবর্তী) কর্পোরেট জগতে কর্মরত। বৃষ্টির বর নীল (ঈশান মজুমদার) ছবি আঁকতে ভালোবাসত। একদিন দিদির প্যানিক অ্যাটাকের খবর পেয়ে, রাতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে নীল আর বৃষ্টি। কিন্তু দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয় গাড়ি চালানোর সময় মদ্যপান নিয়ে। ফলে দুর্ঘটনায় নীল মারা যায়, বৃষ্টি বেঁচে যায় ঘটনাচক্রে। এরপর শোকাচ্ছন্ন ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে থাকতে আসে ননদ। সে আত্মা, ভূত ও নানা সংস্কারে বিশ্বাস করে। বৃষ্টি এ সব মানতে চায় না, মনে মনে বরের মৃত্যুর জন্য ননদকে দায়ী করে। স্বামীর মৃত্যুর প্রায় একবছর পর তাদের বসতবাড়িতে অতিলৌকিক উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। ননদই প্রথমে বাড়িতে পিশাচের উপস্থিতি বুঝতে পারে। পরে দেখা যায়, বৃষ্টির ঘাড়ে ভূত চাপে এবং তাকে দিয়ে নানা অদ্ভুত কাজ করিয়ে নেয়। একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয় বৃষ্টির মধ্যেও, কখনও সে নিজে ভয় পায় আবার কখনও সে-ই ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে। স্বপ্না-বৃষ্টির সম্পর্কের ওঠানামাও চলতে থাকে। তাদের থাকার পুরনো বাড়িটাও যেন চরিত্র হয়ে ওঠে। দরজা খুলে ভূত আসে, আবার চলেও যায় দরজা বন্ধ করে! ভয় সৃষ্টি করতে শব্দ যতটা কার্যকরী, দৃশ্যগুলো ততটা নয়। একটু অন্যভাবেও ভাবা যেত।
অনেকদিন পরে বড়পর্দায় শতাব্দী রায়কে দেখে ভালো লাগল। তাঁর অভিনয়ে মরচে ধরেনি এখনও। ঋতাভরী চক্রবর্তী বৃষ্টির চরিত্রে আগাগোড়া সাবলীল। ঈশান মজুমদার যতটুকু পরিসর পেয়েছেন যথাযথ। তবে চিত্রনাট্য সাদামাঠা। হরর ছবির চিত্রনাট্য এর চেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্যতার দাবি রাখে। ক্ল্যাইম্যাক্সের টান তাহলে বাড়ত। প্রতিবেশীর চরিত্রে জয়দীপ কুণ্ডু ঠিকঠাক। তবে তাঁর বিশেষ কিছু করার ছিল না। শুভদীপ নস্করের সিনেমাটোগ্রাফি ভালো। ছবি শেষের রবীন্দ্রসঙ্গীত মন ছুঁয়ে যায়।