shono
Advertisement
Raas Film review

বাড়ির মায়া, পিছুটান, 'রাস' যেন ঘরে ফেরার গান, পড়ুন রিভিউ

কেমন হল তথাগত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত 'রাস'?
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 05:40 PM Jun 11, 2025Updated: 05:40 PM Jun 11, 2025

বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: পিছুটান বড় মায়ার জিনিস আর তা যদি হয় অসম্পূর্ণ বৃত্তের মতো তাহলে একেবারে ঘ্যানঘ্যানে নাছোড়বান্দা জ্বরের মতো হয়ে দাঁড়ায়। বলা নেই কওয়া নেই যখন তখন ঘুরে ফিরে আসে। আর সবথেকে বেশি করে আমরা পেছন ফিরে ফিরে তাকাই যখন সামনের দিকে তাকিয়ে কিছ দেখা যায় না, যখন সামনের দিকে তাকিয়ে আরাম হয় না কিংবা স্বস্তি হয় না। পৃথিবী, প্রযুক্তি, বিশ্বায়ন, সব সব হইহই করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে, মুঠো ফোনে ধরা পৃথিবী, বোতাম টিপলেই হাতের কাছে পেঁয়াজকলি থেকে পার্টনার, তবু কিসের যেন একটা অস্বস্তি। অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে হয়ে বাড়ি ফিরে পরের দিন অফিস যাওয়ার উন্মাদনাটাই যেন তলানিতে গিয়ে থেকে, ফোন করে কাউকে নিজের কথা বোঝানোর ক্লান্তি থেকে চুপ করে যাই। কেউ কিছু শোনে না, কারও মর্ম কিছু স্পর্শ করে না । এলিয়েনেশন এই পৃথিবীর বড় কঠিন ব্যাধি। এমন এক বেঁচে থাকার সময়ে , রিইউনিয়নের ছবি বানিয়ে ফেলেছেন পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়, যার নাম 'রাস'।

Advertisement

শহরের এক যুবকের দেশের বাড়ি ফেরার গল্প যেখানে তার জন্য এক আশ্চর্য মায়া জড়ানো জীবন অপেক্ষা করে ছিল সে জানতই না। আপাতভাবে আপাদমস্তক স্মার্ট, হ্যান্ডসাম কর্পোরেট চাকুরিজীবী যুবকের বাইরেটা কেতাদুরস্ত হলেও সেটা একটা মুখোশ, কারণ এই হাই স্পিড দুনিয়ায় কেউ নিজের আসল মুখ নিয়ে আসে না, আসতে নেই। সে সব কিছুই করে, দারুণ স্মার্ট সুন্দরী বান্ধবীর সঙ্গে বিয়ে পাকা, তবু তার মনে সুখ নেই, বাড়ি ফিরে সে একা, বাবাকে ভয়ে মনের কথা বলতেও পারে না। আমরা সকলেই বোধহয় এই ছেলেটির মতো একটা পালিশ করা মুখোশ পরে অন্য মানুষ সেজে সমাজে বের হই, কাজে যাই, সোশালাইজ করি। অন্যায় দেখলে চুপ করে থাকি, অফিসে অপমানিত হলে হেসে উড়িয়ে দিই, পার্টিতে মজার খোরাক হয়ে উঠলে ডিগনিটির দোহাই দিয়ে একটা স্মিত হাসি ঝুলিয়ে রাখি। তারপর যখন বাড়ি ফিরি, একেকদিন মুখোশটা খুলতে গেলে চামড়া ছিঁড়ে যায়, একেকদিন হয়তো ক্লান্ত হয়ে মুখোশ পরেই ঘুমিয়ে পড়ি। তারপর ধীরে ধীরে মুখোশটাই সেকেন্ড স্কিন হয়ে যায়। ‘রাস’ নিয়ে লিখতে গিয়ে এই কথাগুলো বলছি কারণ আমাদের প্রত্যেকের খুব গভীরে সেই আসল মানুষটাকে খোঁজার একটা পিছুটান থাকে, সত্যি বাঁচার মুহূর্তগুলোর কাছে ফেরার তাগিদ থাকে। এই ছবিটা আপাতভাবে দেখতে গেলে ফ্যামিলি রিউনিয়নের ছবি হলেও নানা রকম ফেরার ইঙ্গিত রেখে যায়। এবং যে বাংলা ছবি ছোটবেলায় দেখে নির্মল আনন্দ পেয়েছে সেই দিনগুলোর কাছেও ফেরা যেন। নাহলে শহুরে যুবক যখন গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে পানা পুকুরে আছাড় খেলো কেন আমার ‘সমাপ্তি’র অমূল্যর কথা মনে পড়ল! আর কেনই বা বাড়ির উঠোনে পরিবারের সদস্যদের নাচ গান, নাটক দেখে ‘দাদার কীর্তি’র কথা মনে পড়ল, সেই সঙ্গে মনে পড়ে গেল কোন্নগরের, নবগ্রামে বাবার মামার বাড়িতে কালীপুজোর সময় সারা রাতব্যাপী পরিবারের সবাই মিলে নাচ-গান আবৃত্তি পাঠের আসর বসত। এখন অবশ্য এই বাড়িতে বোধহয় এক ভাইয়ের পরিবার ছাড়া কেউ থাকে না।


মানিকপুরের কুয়াশামাখা ভোর, আলপথ ধরে ভোরের সাইকেল চালক, খেজুর গাছের সারি, ঘন সবুজ ধানক্ষেত, কিংবা শহরের যুবকের সঙ্গে গ্রামের মেয়েটার চাঁদনি রাতে নৌকোবিহার দেখে এবং বিশেষ করে নির্জন প্রকৃতির নানা রূপ দেখে কেন মনটা জুড়িয়ে গেল? কিংবা গ্রামের এই বিশাল যৌথ পরিবারের ভিড়ে যে সেজকা একটু আলাভোলা, পাখি, গাছ, আরশোলা, ইঁদুরের সঙ্গে কথা বলে অর্থাৎ আমাদের হিসেবের বাইরের মানুষ তার সহজ প্রশ্ন, সরল দৃষ্টিভঙ্গি কেন সোজা বুকে এসে লাগল? (এই চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী মুগ্ধ করেছেন) আমরা সব কিছু যে এত বেশি জটিল করে দেখি তা কীসের জন্য কখনও ভেবে দেখেছি?
‘রাস’ অনেক কিছুর সঙ্গে এই সহজ করে দেখতে পারাটাও ফিরিয়ে দেয়। সাদাকালো ছবির জমানায় ঠিক যেমন সহজ সরল ছবি হত, আর আমরা মামাবাড়ি গেলে জড়ো হয়ে বসে দেখতে দেখতে চোখের জল ফেলতাম, এ তেমন ছবি তবে সেই মানের অভিনেতার অভাব বোধটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না। আর মাঝে মাঝে সবার একসঙ্গে কথা বলা এমন এক ক্যাকোফোনি তৈরি করে যা রূপকথার জগতে ফিরে যাওয়ার আরামের ঘোরটা কাটিয়ে দেয়। পুকুর বাগান বিক্রি নিয়ে গোল বাধলে পরে নিজের ব্যবহারে লজ্জিত হয়ে অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের মুখে যে সংলাপ তা ফেলনা নয় কিন্তু এই ছবি তো যুক্তির ছবি নয় তা আগে থেকেই ঠিক করে ফেলেছেন পরিচালক। তবে এই দৃশ্যে অর্ণ দারুণ। একটি ছোট্ট চরিত্রে তাক লাগিয়েছেন বিমল গিরি। প্রথমবার বিক্রম-দেবলীনাকে একসঙ্গে বেশ লাগে। বিক্রম সেই শহুরে যুবক যে দেশের বাড়িও ফেরে, ফেরে নিজের প্রথম প্রেমের কাছেও। আরও অনেক ধরনের ফেরার গল্প আছে ছবিতে। কেউ ফেরে সাতের দশকে, কেউ ফেরে নিজের অধিকারের কথা বলতে। কিন্তু সেইসব দেখতে হলে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটা দেখতে হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বিক্রম সেই শহুরে যুবক যে দেশের বাড়িও ফেরে, ফেরে নিজের প্রথম প্রেমের কাছেও।
  • রিইউনিয়নের ছবি বানিয়ে ফেলেছেন পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়, যার নাম 'রাস'।
  • রাস' দেখতে দেখতে কেউ ফেরে সাতের দশকে, কেউ ফেরে নিজের অধিকারের কথা বলতে।
Advertisement