শুভজিত মণ্ডল: ম্যাচের দুটি সিচুয়েশন। ৭১ রানে ৫ উইকেট ভারতের। তবু, ভারতবাসী আশা ছাড়েনি। কারণ, ধোনি তখনও রয়েছেন। ২ ওভার বাকি, ৩১ রান দরকার। ৭টি উইকেট পড়ে গিয়েছে। তবু, ভারতবাসী আশা ছাড়েনি। কারণ, ক্রিজে ধোনি রয়েছেন। পরের বলে লকি ফার্গুসনের রকেট গতির বাউন্সারকে তিনি যখন অবিশ্বাস্য ভঙ্গিমায় অফ স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে ফেলে দিলেন, তখন গোটা দেশ যেন প্রাণ ফিরে পেল। সবাই বিশ্বাস করা শুরু করল, ধোনি শেষ বল পর্যন্ত থাকলে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়বেন।
[আরও পড়ুন: কাজে এল না ধোনি-জাদেজার লড়াই, সেমিফাইনালেই বিশ্বজয়ের স্বপ্নভঙ্গ ভারতের]
কিন্তু, তিনি পারলেন না। মার্টিন গাপ্তিলের এক মুহূর্তের ব্রিলিয়ান্স, অবিশ্বাস্য ডায়রেক্ট হিটে রান আউট। ধোনির নিখুঁত ক্যালকুলেশনে জল ঢেলে দিল। সেই সঙ্গে চুরমার হয়ে গেল ১৩০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন। যিনি স্বপ্ন দেখালেন, প্রতিপক্ষের অনবদ্যতার কাছে তাঁকে হার মানতে হল, অথচ ম্যাচ শেষে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো হচ্ছে সেই ধোনিকেই। একবারও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে না, কেন ধোনিকে চার নম্বরে নামানো হল না। যখন পরের পর উইকেট পড়ছে, তখন কেন ধোনির মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে বাইরে রেখে পাঠানো হল ঋষভ পন্থ, দীনেশ কার্তিকদের। যে প্রশ্নটা, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ম্যাচ শেষে তুললেন… গোটা দেশেরও কি সেই প্রশ্নটাই করা উচিত নয়? স্লো ব্যাটিংয়ের জন্য ধোনিকে কাঠগড়ায় না তুলে, কোহলিকে গিয়ে প্রশ্ন করা উচিত নয়, কেন তিনি এ হেন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাত্র ১ রান করে ফিরলেন। কেন প্রতিটি ম্যাচ হয় রোহিত শর্মা-নয় মহেন্দ্র সিং ধোনি, নয় জশপ্রিত বুমরাহকে জেতাতে হবে..? অধিনায়ক যদি সাফল্যের কৃতিত্ব পান তাহলে পরাজয়ের দায়ও তো তাঁকেই নিতে হবে।
[আরও পড়ুন: কাজে এল না ধোনি-জাদেজার লড়াই, সেমিফাইনালেই বিশ্বজয়ের স্বপ্নভঙ্গ ভারতের]
এই তো প্রথম নয়, এর আগেও ভারতের মিডল অর্ডারের দুর্বলতা ধরা পড়েছে। তাতে কী ব্যবস্থা নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট? লাগাতার ব্যর্থতার পরও দীনেশ কার্তিকদের আলাদা করে কোনও টোটকা কি দেওয়া হয়েছে? টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পর্যন্ত কেন চার নম্বরে কে খেলবেন তা ঠিক করা গেল না? মহম্মদ শামি না ভুবনেশ্বর কুমার, এ প্রশ্ন কেন টুর্নামেন্টের মাঝে উঠবে? রবীন্দ্র জাদেজা প্রথম একাদশে থাকবেন কিনা সেটাই বা কেন টুর্নামেন্টের মাঝপথে গিয়ে ঠিক হবে? এ হেন হাজারো প্রশ্ন কী ধোনির আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে না? যে প্রশ্নগুলির উত্তর অধিনায়ক কোহলি-কিংবা কোচ রবি শাস্ত্রী বা নির্বাচক কমিটির প্রধান এমএসকে প্রসাদকে দিতেই হবে। শুধু সব দায় ধোনির ঘাড়ে ঠেলে দেওয়াটা হয়তো বড্ড বেশি অন্যায় হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ম্যাঞ্চেস্টারে ব্যাটিং বিপর্যয় ভারতের, লজ্জাজনক পরিসংখ্যান কোহলির]
আজও হয়তো, ৭১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর জাদেজা-ধোনির লড়াইটা যদি না থাকত তাহলে ভারতের কী অবস্থা হত তা হয়তো এবার ভাবার সময় এসেছে। সেমিফাইনালের মতো মেগা ম্যাচে ছয় বা সাত নম্বরে নামা ব্যাটসম্যান এসে ম্যাচ জিতিয়ে দেবেন সেটা ভাবাটাই কি বড় ভুল নয়? তবু, ভারতবাসী এই ভুলটা করতে পারেন, কারণ ছয় নম্বরে ধোনি ব্যাট করেন। কারণ, আপামার ভারতবাসী জানেন, ধোনি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়.. আজ হয়তো হল না। সব লড়াই তো আর জেতা যায় না। তাই, ধোনির উপর দায় ঠেলাটা বন্ধ করে এবার হয়তো অন্যদেরও প্রশ্ন করার সময় এসেছে? কারণ, ধোনি তো আর চিরদিন থাকবেন না..।
The post এরপরেও ধোনিকে দোষ দেবে ভারত! কোহলিরা কি পার পেয়ে যাবেন? appeared first on Sangbad Pratidin.