মোহনবাগান: ৩ (‘১৫ দীপক টাংরি,’২৮ জেসন কামিন্স, ‘৭১ শুভাশিস বোস)
নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড: ১ (‘৪ ফাল্গুনি সিং)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চলতি আইএসএলে (ISL 10) একাধিকবার এমন মুহূর্ত সামনে এসেছে। ভারতীয় ফুটবল সাক্ষী থেকেছে মোহনবাগানের (Mohun Bagan) লড়াইয়ের। পিছিয়ে থেকে এবারও জয়ের মুখ দেখল সবুজ-মেরুন। এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবার নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডকে (North East United) তাদের ঘরের মাঠে ৩-১ গোলে হারিয়ে দিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। শুরুতে গোল হজম করলেও, বিপক্ষের নেটে তিনবার বল জড়িয়ে তিন পয়েন্ট তুলে নিল গতবারের চ্যাম্পিয়ন দল। অ্যাওয়ে সবুজ-মেরুনের তিন গোলদাতা দীপক টাংরি (Deepak Tangri), জেসন কামিন্স (Jason Cummings), শুভাশিস বোস (Subhasish Bose)।
যদিও শুরুটা মোহনবাগানের অনুকূলে ছিল না। খেলার বয়স তখন সবে চার মিনিট। দুই দলের ফুটবলারদের গা গরম হয়নি। তবে গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামের গ্যালারিকে গরম করে দেন ফাল্গুনি সিং। জিথিনের থেকে পাস পেয়েই সবুজ-মেরুনের বারপোস্ট কাঁপিয়ে দেন ২৮ বছরের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। অনিরুদ্ধ থাপা ও ব্রেন্ডন হ্যামিলের মাঝ থেকে জায়গা বের করে দলকে এগিয়ে দেন। ডান পা থেকে নেওয়া তাঁর দুরপাল্লার শট পোস্টের উপরের দিক থেকে জালে জড়িয়ে যায়। তাঁর সেই নিখুঁত শট বিশাল কাইথের পক্ষে রুখে দেওয়া সম্ভব ছিল না। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় পাহাড়ের দলটি।
[আরও পড়ুন: পাকিস্তানের পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হার, যুব এশিয়া কাপ থেকে বিদায় ভারতের]
তবে মোহনবাগানকে সমতা ফেরাতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। ১৫ মিনিটের মাথায় গোলের মুখ খোলেন দীপক টাংরি। বিপক্ষের গোলকিপার মিরশাদের ভুলে স্বস্তি ফেরে সবুজ-মেরুন শিবিরে। লিস্টন কোলাসো বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে ক্রস তুলেছিলেন। সেই রানিং বলকে চেজ করে গোল করতে চাইছিলেন দীপক। তবে পারেননি। অনেকটা এগিয়ে বলকে দুই হাতে সামনের দিকে পাঞ্চ করেন ইস্টবেঙ্গলে খেলে যাওয়া গোলকিপার। সেই ফিরতি বল দীপকের কাঁধে লেগে জালে ঢুকে যায়। স্কোরলাইন তখন ১-১।
দিমিত্রি পেত্রাতোস নেই। আর্মান্দো সাদিকু, কিয়ান নাসিরি প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ। অনেকেই মনে করেছিলেন মোহনবাগানকে এগোতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। তবে তেমনটা হল না। ফের একবার ভুল করলেন মিরশাদ। সাদিকু হেড করে বলটি গোলের মুখে পৌঁছে দেন। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকা জেসন কামিন্স সহজে বলটি জালে জড়ান। ২-১ এগিয়ে যায় মোহনবাগান।
ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচের পর রয় কৃষ্ণার সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন জুয়ান ফেরান্দো। তাঁকে লালকার্ড দেখানো হয়। ফলে এই ম্যাচে তিনি বেঞ্চে বসতে পারেননি। যদিও দলের হেড কোচ সাইডলাইনে না থাকলেও, মোহনবাগানকে অ্যাওয়ে ম্যাচে দাপট দেখাতে বেগ পেতে হয়নি। আর তাই বিপক্ষের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধের পর মাঠ ছেড়েছিলেন শুভাশিস বোসরা।
ঘরের মাঠে কি নর্থ-ইস্ট ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিল সবাই। তবে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই বড় ধাক্কা খায় পাহাড়ের দলটি। কিয়ানকে ফাউল করার জন্য তংডম্বা সিং-কে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। ফলে তংডম্বা লাল কার্ড দেখার ১০ জনের হয়ে যায় নর্থ-ইস্ট। ১০ জন হয়ে যাওয়ার পর আরও দুটি হলুদকার্ড দেখে নর্থ-ইস্ট। ৫৫ মিনিটে বেমাম্মের রেফারির সঙ্গে তর্ক করার জন্য একটি হলুদ কার্ড দেখেন। এর পর ফের কিয়ানকে বেপরোয়া ভাবে ট্যাকেল করে সামতে ৫৮ মিনিটে হলুদকার্ড দেখেন।
৬২ মিনিটে এগিয়ে থাকা মোহনবাগানকে আরও মজবুত জায়গায় রাখার জন্য দুটি বদল করেন সহকারী কোচ ক্লিফোর্ড মিরিন্ডা। কিয়ানের জায়গায় মাঠে নামেন মনভীর সিং। অন্যদিকে বিপক্ষকে চাপে রাখার জন্য গোলদাতা জেসনের পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয় হুগো বুমোসকে। সেখানেই বাগানের দাপট আরও বেড়ে যায়। ৭১ মিনিটে গোল করে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দেন শুভাশিস। ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় সবুজ-মেরুন। কোলাসো ওভারল্যাপিংয়ে উঠে শুভাশিসকে একটি দুর্দান্ত পাস বাড়ান। মোহনবাগান অধিনায়ক সেই বল ধরে জোরালো শট মারেন। তবে মিরশাদ কিন্তু বলটি সেভ করতে পারতেন। কিন্তু ফের খারাপ গোলকিপিং। ৩-১ করে ফেলেন শুভাশিস। এর পর সবুজ-মেরুনের দাপুটে জয় ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা।