গোবিন্দ রায়: করোনা (Corona Pandemic) আতঙ্কে যখন সবাই জুবুথুবু, তখন সংক্রমিত ব্যধি দূর করতে করম পুজো করল সুন্দরবনের আদিবাসী সমাজ। তাদের বিশ্বাস করম পুজোর মাধ্যমেই দূর হবে করোনা ভাইরাস করোনা। পাশাপাশি, যশ, টর্নেডোর মতো একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেভাবে আঘাত হানছে তার প্রতিরোধেও প্রকৃতিকে পুজো করতে হবে বলেও মত আদিবাসী সমাজের।
প্রত্যন্ত সুন্দরবনের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা সন্দেশখালিতে দীর্ঘদিন ধরে সাঁওতাল, মুন্ডা, কোল, বীরহোর, খেরিয়া, ভূমিজ, হো, ওরাঁও প্রভৃতি উপজাতিরা পালন করে থাকেন অত্যন্ত জনপ্রিয় উৎসব ‘করম পুজোর’। কিন্তু এবছর একদিকে করোনা মহামারীর প্রকোপ ঠেকাতে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই পেতে করম দেবতার কাছে এবার যেন একটু বেশিই কাকুতি-মিনতি সুন্দরবনের আদিবাসী সমাজের।
[আরও পড়ুন: ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিয়েছেন, আশা করি পেনশন সমস্যা মিটবে’, ঘরে ফিরে বললেন বুদ্ধদেব শ্যালিকা]
আদিবাসী ওঁরাও সম্প্রদায়ের ধর্মকথা অনুযায়ী জানা যায়, একবার অগ্নিপ্রলয় হয়েছিল, আগ্নেয়গিরি থেকে লাভার মত আগুন ঠিকরে বেরোচ্ছিল। সে সময় নায়েক ও সারেন নামের দুই ভাইবোন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলে, তারা করম গাছের কোটরে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ পান। আগুনে সব পুড়ে ছাই হলেও করম গাছের কোন ক্ষতি হয়নি। রক্ষা পান নায়েক এবং সারেনও। সেই থেকে প্রকৃতির করে আসছে আদিবাসী সমাজ। পুজোর মূল কেন্দ্রে থাকে করম গাছের ডাল। করম গাছকে ভগবান হিসেবে পুজো করা হয়। আদিবাসী সমাজের পুরোহিত অর্থাৎ পাহান নির্দিষ্ট রীতি মেনে করম ডালের পুজো করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় উৎসব। টানা আট দিন সেই পুজোতে মেতে উঠবেন আদিবাসী সমাজের মানুষেরা।
এদিন সন্দেশখালি ব্লকের বয়ারমারীতে আদিবাসী নৃত্য, ধামসা আর মাদলের তালে রাতভর করম উৎসবে মাতলেন বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আদিবাসী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক অশ্বিনী মাহাতো, মানস মাহাতো, মধুসূদন মাহাতো-সহ সমাজের বিশিষ্টজনেরা। বিধায়ক সুকুমার মাহাতো, আদিবাসী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক অশ্বিনী মাহাতোরা জানান, “করম পুজো আসলে গাছকে পুজো করা। প্রাচীনকাল থেকে আদিবাসী সমাজের কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে করম গাছকে পুজোর রীতি চলে আসছে। আদিবাসী সমাজের মানুষেরা সম্প্রতি বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে বলতে গিয়ে বারবার বলেছেন প্রকৃতি রুষ্ট হয়েছে। তাই করোনার মত উপসর্গ এনে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখছে। সেকারণেই প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে।”