মেনকোর্স বা ডেসার্ট যাই হোক না কেন স্বাস্থ্যকর খাবারই বাছাই করা উচিত। স্বাদের বদলে মন মজুক পুষ্টিতে। রইল খাদ্যগুণ বিচারের মাপকাঠি।
ভাত-রুটি
ভেতো বাঙালির ভাতে অরুচি নেই। অধিকাংশেরই শুধু দুপুরে নয়, রাতেরও মুখ্য খাবার ভাতই। এদিকে নানা অসুখ নিয়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হলে রুটির পাল্লা সবসময় ভারী। ভাত-রুটির লড়াইয়ে স্বাস্থ্যগুণে এগিয়ে কে?
আসলে, আমরা রিফাইন বা পরিশুদ্ধ চালের ভাত খাই। এই পরিশুদ্ধিকরণের সময় চাল বা ভাতে উপস্থিত মাইক্রো-নিউট্রেন্ট (ভিটামিন, মিনারেল) বেরিয়ে যায়। ফলে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন ও ক্যালশিয়ামের জোগানও ভাত খেয়ে পাওয়া যায় না। তবে ফাইবার কম থাকায় সহজে হজম করা যায় বলে ডায়েরিয়া কিংবা পেটের সমস্যায় ভাত খেলে উপকার। সেদিক থেকে গমের রুটি ফাইবার সমৃদ্ধ। প্রোটিন ও মিনারেল যেমন আয়রন, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতিও বেশি। ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভাতের বদলে রুটি খান। পুষ্টির বিচারে ভাতের থেকে অনেক এগিয়ে রুটি।
[শীতে সুস্থ থাকতে মেনুতে রাখুন এই খাবারগুলি]
মাংস-সয়াবিন
প্রাণীজ প্রোটিনের একটি অন্যতম উৎস হল মাংস। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার ন্যাশনাল নিউট্রেশন্যাল ডেটাবেস ফর স্ট্যান্ডার্ড রেফারেন্সের তথ্য অনুযায়ী, ৮৫ গ্রাম মাংসতে (রেড মিট) ২৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। সেই তুলনায় এই সমপরিমাণ তফুতে (সয়াবিন মিল্ক থেকে তৈরি পনির) প্রোটিনের পরিমাণ ১৩ গ্রাম ও দেড় কাপ সয়াবিন খেলে তাতে প্রোটিনের পরিমাণ ১৬.৫ গ্রামের সমান। তাই সুস্থ থাকতে শরীরে প্রোটিনের জোগান দিতে মাংসের বদলে নিশ্চিন্তে খাওয়া যেতে পারে সয়াবিন।
মাংস খাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে অনেক। মাংস খেলে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ফ্যাটও বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে প্রবেশ। যা উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। হার্টের সমস্যা ডেকে আনে। তাই মাংসের পরিপূরক হিসাবে খান সয়াবিন। সয়াবিনে প্রোটিন যেমন মাংসের সমান তেমন মাংসের খারাপ গুণগুলিও এতে অনুপস্থিত। সয়াবিন গুড ফ্যাট বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। এছাড়া মাংসের চেয়ে সয়াবিন কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার সমৃদ্ধ।
আইসক্রিম-দই
বিয়েবাড়ি কিংবা বার্থডে পার্টি! অথবা রোববার দুপুরের ভোজ। খাবারের শেষ পাতে আইসক্রিম না খেলে যেন খাওয়া কমপ্লিট হয় না। কখনও মেনুতে আইসক্রিমের বদলে দই। দুটিই দুগ্ধ জাতীয় খাবার, তফাত শুধু স্বাদে ও গুণে। আইসক্রিমের চেয়ে দইয়ে ফ্যাট ও ক্যালোরির মাত্রা অনেক কম। দই তৈরি করতে দুধের ক্রিম সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে লাগে না। অন্যদিকে আইসক্রিমে দুধের ক্রিম ও তার সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান যেমন- চকোলেট, বাদাম ও অতিরিক্ত চিনি মেশানো হয়। ফলে এতে ক্যালোরি দইয়ের চেয়ে অনেক বেশি থাকে।
কোল্ড ড্রিংক-লেবুর জল
বিরিয়ানি, কাবাব কিংবা যেকোনও স্ন্যাক্স, সবকিছু জমে যায় যদি সঙ্গে থাকে কোল্ড ড্রিংক। খাওয়ার পাতে তৃপ্তি দিলেও ক্ষতির লিস্ট লম্বা। বিভিন্ন কোল্ড ড্রিংকে একধরনের অ্যাসিড মেশানো থাকে। এই অ্যাসিডের স্বাদ ঢাকতে অতিরিক্ত সুগার এতে মেশানো হয় যা এই ধরনের ড্রিংকসের পানের ইচ্ছা বাড়ালেও শরীরে ক্ষতি করে মারাত্মক। তৈলাক্ত, ভাজা খাবারের সঙ্গে এই ঠান্ডা পানীয় পান করার দরুন শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস অসুখ ডেকে আনতে পারে। এছাড়া কোল্ড ড্রিংকে উপস্থিত ক্যাফিন আমাদের খাবারে ইচ্ছা না থাকলে ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ক্যালোরি বাড়াতে থাকে। লিভারের ক্ষতি করে। নিউরোলজিক্যাল সমস্যাও ডেকে আনে। এতে উপস্থিত বিভিন্ন রং ক্যানসারের কারণও হতে পারে। তাই খাবার হজম করতে কোল্ড ড্রিংকে ভরসা না করে লেবুর জল খেলে বেশি উপকার। প্রথমত এই জলে কোনও ক্ষতিকর কেমিক্যালের উপস্থিতি থাকে না। সাধারণত খুব ঝাল-মশলা বা অম্ল জাতীয় খাবার খেলে শরীরের অ্যাসিডিটির ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যায়। তাই খাওয়ার পর এই জল খেলে সেই ব্যালেন্স ঠিক থাকে ও বদ হজমের সমস্যা দূর করে। এই জল ভিটামিন সি-এর উৎস। যা শরীরে হজমে সাহায্যকারী উৎসেচকের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
[জানেন কেন শপিং মলের এক্কেবারে উপর তলাতেই থাকে ফুড কোর্ট?]
ফ্রুট কেক-পেস্ট্রি
শুধু বড়দিনের মরশুমে নয়, ফ্রুট কেক, পাম কেক এখন সারা বছরের খাবার। জলখাবার, টিফিনে এক টুকরো মুখে চালান করলেই নিমেষে মিলিয়ে যায়। এমন এক পিস খেলে কতটা এনার্জি আপনার শরীরে যায়, জানেন? এক টুকরো ফ্রুট কেকে ক্যালোরি ১৩৯। চিনি থাকে ১২ গ্রাম। মোট কার্বোহাইড্রেট ২৬ গ্রাম। ফ্যাটের পরিমাণ ৩.৯ গ্রাম। কোলেস্টেরল ২.২ মিলিগ্রাম। আয়রন ৪%। থাকে সোডিয়াম-পটাশিয়ামও। ফ্রুট কেকে শুকনো ফল, বাদাম দেওয়া থাকায় ভরপুর এনার্জি।
উলটোদিকে চকোলেট, ভ্যানিলা, বাটারস্কচ, রকমারি পেস্ট্রি, ক্রিম কেকের সঙ্গে মাখো মাখো প্রেম অনেকের। শরীরে ফ্যাট যাচ্ছে জেনেও পেস্ট্রির প্রতি আসক্তি কমে না কিছুতেই। কতটা ভাল কতটা খারাপ, জেনে রাখুন অবশ্যই। একটি পেস্ট্রিতে ক্যালোরি ২৬৯। ফ্যাট ১৮ গ্রাম। কার্বোহাইড্রেট ২১ গ্রাম। ভরপুর সোডিয়াম-পটাশিয়াম। প্রোটিন ৩.৪ গ্রাম।
The post মেনকোর্স বা ডেসার্ট, সুস্থ থাকতে স্বাদের বদলে মন মজুক পুষ্টিতে appeared first on Sangbad Pratidin.