সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পঞ্চায়েতের পরিষেবা এবার ঘরে বসেই। একেবারে হাতের নাগালেই স্মার্টফোনে। বিভিন্ন সার্টিফিকেট থেকে কর প্রদান। একশো দিনের কাজে আবেদন থেকে অভাব- অভিযোগ জানানো। এমনকী পর্যটন প্রকল্পের বুকিং ও পেমেন্টও হবে ওই অ্যান্ড্রয়েড মুঠো ফোনেই।
পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লকের প্রত্যন্ত লাখরা গ্রাম পঞ্চায়েত তাদের পরিষেবাকে একেবারে হাতের কাছে পৌঁছে দিতে চালু হল অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে e-panchayet Lakhra টাইপ করলেই ডাউনলোড করা যাবে। শনিবার ওই পঞ্চায়েত ভবনেই জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের উপস্থিতিতে এই অ্যাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত স্তরে পরিষেবামূলক এমন অ্যাপ সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম বলে ওই পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি। এই ধরনের অ্যাপ কেন্দ্র ও তেলেঙ্গানা সরকারের রয়েছে। পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে পরিষেবা মূলক অ্যাপের এমন বিষয়টি জেলা প্রশাসনের তরফে রাজ্যের কানে যাওয়ায় নবান্ন এই বিষয়টি বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েত পরিষেবায় এই অ্যাপ নয়া দিগন্ত। সুশাসনের উদাহরণ। পঞ্চায়েত থেকে পাওয়া পরিষেবাগুলো আমরা খুব সহজেই গ্রামবাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। সে জন্যই এই অ্যাপ চালু করা হয়েছে।” আগামী দিনে এই অ্যাপের নাম ‘সুশাসন লাখরা’ রাখতে চাইছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।
[আরও পড়ুন: উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র আশঙ্কা, পিছিয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর]
কী পরিষেবা মিলবে এই অ্যাপে? গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে প্রধান যত ধরনের সার্টিফিকেট বা শংসাপত্র দিয়ে থাকেন। তা ওই অ্যাপে আবেদনের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ আবেদনের পাশাপাশি সেখান থেকে ডাউনলোড করা যাবে। রেসিডেন্সিয়াল, ইনকাম, ডিসটেন্স, আনম্যারেড, কাস্ট, সেম পার্সেন ও ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট। এছাড়া সমস্ত রকমের কর প্রদান করা যাবে। ওই অ্যাপ থেকেই মিলবে করের রসিদ। ওই পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের তার বাড়ি ও জমির জন্য কত কর দিতে হবে তা নির্ধারণও হয়ে যাবে ওই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট গৌতম দাস বলেন, “কর দেওয়ার সদিচ্ছা থাকলেও নানা কাজের চাপে পঞ্চায়েতে গিয়ে তা প্রদান করতে পারেন না অনেকেই। আমাদের এই অ্যাপে তা সহজেই হবে। কর প্রদান করার পরে রসিদও ডাউনলোড করতে পারবেন। পঞ্চায়েতস্তরে এই ধরনের পরিষেবামূলক অ্যাপ দেশের মধ্যে প্রথম।”
এছাড়া এই অ্যাপ থেকেই নানান অভাব-অভিযোগ জানানো যাবে পঞ্চায়েতে। কোন জায়গায় নলকূপ খারাপ, নর্দমা বেহাল, তার ছবি তুলে গ্রাম সংসদ ও বুথের নম্বর লিখে দিলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেবে ওই পঞ্চায়েত। ওই অ্যাপে থাকা অভাব-অভিযোগের কলামে বিভিন্ন গ্রাম সংসদের নাম দেওয়া রয়েছে। তা নির্বাচন করে লিখে দিলেই পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ওই নির্দিষ্ট অভিযোগটি কোন পর্যায়ে রয়েছে তাও জানান দেবে ওই নয়া অ্যাপ। সেই সঙ্গে একশো দিনের কাজ পেতে আবেদন করা যাবে। অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেই অভিযোগ ওঠে এই প্রকল্পে কাজের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয় না। কারণ আবেদন গ্রহণ করলেই ১৫ দিনের মধ্যে কাজ দিতে হবে। এই অ্যাপে আবেদন করলে পঞ্চায়েতের সেই সুযোগ থাকবে না। ওই আবেদনের ভিত্তিতে বিধি অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে আবেদনকারীর মোবাইলে মেসেজ চলে যাবে তিনি কোন এলাকায় কাজ পাবেন। সেখানকার সুপারভাইজারের নাম ও মোবাইল নাম্বার মেসেজে থাকবে। যাতে তিনি কর্মস্থলে গিয়ে তার সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ‘মাটির সৃষ্টি’ যে পর্যটন প্রকল্প রয়েছে সেখানে রাত কাটাতে বুকিং হবে এই অ্যাপে। সেই সঙ্গে হবে পেমেন্টও।