সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর ঠিক সপ্তাহখানেক বাকি। আর তারপরই বাংলা নববর্ষ। নতুন বছরকে স্বাগত জানাবেন আর কেনাকাটি করবেন না, তা তো হতে পারে না। তাই নিশ্চয়ই ব্যাগ ভরতি করে কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন? শাড়িপ্রেমী তন্বী কেনাকাটি করছেন, আর সেই তালিকায় জামদানি থাকবে না তা হতে পারে? কিন্তু অনেক ব্যবসায়ীর আশঙ্কা, বাজার ছেয়েছে নকল জামদানিতে। তাই কেনার আগে সাবধান হোন। জেনে নিন কীভাবে আসল জামদানি কিনবেন, রইল টিপস।
কালেকশনে রাখার আগে চলুন জেনে যাওয়া যাক জামদানির নামকরণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতের কথা। ‘জামদানি’ শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। ফারসি ‘জাম’ অর্থ কাপড় এবং ‘দানা’ অর্থ বুটি। সে অর্থে জামদানি বলতে বোঝায় বুটিদানার কাপড়। জামদানি ও মসলিনের প্রচলন প্রায় একই সময়ে শুরু হয়। জামদানির প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে। বিভিন্ন আরব, চিনা ও ইতালীয় পর্যটক ও ব্যবসায়ীর বর্ণনায়। কৌটিল্যের বইতে বঙ্গ ও পুন্ড্র এলাকায় সূক্ষ্মতম বস্ত্রের উল্লেখ আছে।
[আরও পড়ুন: একঢাল চুল পেতে অনিয়ন অয়েলের জুড়ি মেলা ভার, জেনে নিন তেল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য]
যার মধ্যে ছিল ক্ষৌম, দুকূল, পত্রোর্ণ ও কার্পাসিকা। রপ্তানির সময় কার্পাসিকারই নাম হয় মসলিন। মসলিন ছিল এক রঙের। আর তার মধ্যে কারুকাজ করা কাপড়কে বলা হত জামদানি। মূলত, ঢাকা জেলাতেই মসলিন চরম উৎকর্ষ লাভ করে। ঢাকার সোনারগাঁও, ধামরাই, রূপগঞ্জ মসলিনের জন্য বিখ্যাত ছিল। মোঘল আমলে জামদানির ব্যাপক প্রসার ঘটে। সম্রাট জাহাঙ্গির জামদানির পৃষ্ঠপোষকতা করেন। প্রখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা চতুর্দশ শতকে লেখা তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্তে সোনারগাঁয়ের বস্ত্রশিল্পের প্রশংসা করতে গিয়ে মসলিন ও জামদানির কথা বলেছেন। তবে জামদানি শাড়ির সব বিখ্যাত ও অবিস্মরণীয় নকশা ও বুননের অনেকগুলোই বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়।
এবার চলুন আসল জামদানি কেনার পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। বিশেষজ্ঞদের মতে,
- আসল জামদানিতে প্রথম সাড়ে পাঁচ হাত অংশে কোনও পাড় থাকে না। মেশিনে বোনা জামদানিতে পুরোটাই পাড় থাকে।
- আসল জামদানি সবসময় হাতে বোনা হয়। তাই তার দাম স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি।
- আজকাল অনেকে হাতে বোনা বলেও মেশিনে বোনা জামদানি বিক্রি করছেন। তফাৎ বুঝবেন কীভাবে? শাড়িটি উলটে নিন। হাতে বোনা শাড়িতে সুতোর কোনও অংশ বেরিয়ে থাকে না। কিন্তু মেশিনে বোনা জামদানিতে সুতো উঠে থাকে।
- জামদানি কেনার সময় সুতোর মান যাচাই করতে ভুলবেন না। আসল জামদানি বুনতে সুতি এবং সিল্ক সুতো ব্যবহার করা হয়। মেশিনে বোনা জামদানিতে নাইলন সুতো কাজে লাগানো হয়। তাই শাড়ি নরম হয় না।
- জামদানি কেনার আগে নিন সুতোর কাউন্ট কত? ৩২-২৫০ কাউন্টের শাড়ি কিনুন।
- হাতে বোনা জামদানি অত্যন্ত হালকা। দু-একবার পরলেই তা নেতিয়ে যায়। কিন্তু মেশিনে বোনা জামদানির ওজন তুলনামূলক বেশি হয়।
তাই জামদানি কেনার আগে এই মাপকাঠিতে যাচাই করতে ভুলবেন না। নইলে কিন্তু নববর্ষের আগে টাকা গুনেও লাভ কিছুই হবে না।