সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশে সামরিক আইন লাগু করার জেরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল আগেই। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে গ্রেপ্তার করা হল দক্ষিণ কোরিয়ার বরখাস্ত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। বুধবার ইউনের বাস ভবনে ঢুকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইউনকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তাঁর নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে রীতিমতো সংঘর্ষ হয় পুলিশের। শেষে মই বেয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় সে দেশের পুলিশ।
গত সপ্তাহ থেকেই ইওলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছিল সেখানকার প্রশাসন। তবে নিজের বাসভবনে ব্যক্তিগত ঘেরাটোপের মধ্যে ছিলেন তিনি। গত ৩ জানুয়ারি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তাঁর নিরাপত্তাকর্মীদের। প্রথমবার ব্যর্থ হওয়ার পর বুধবার দ্বিতীয় দফায় গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলে। আগের মতো এবারও বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত মই বেয়ে ইউনের বাসভবনে ঢোকে পুলিশ। এর পর বেশ কয়েকঘণ্টা ধরে প্রবল বাগবিতণ্ডতা ও তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে হাতাহাতির পর পুলিশ গ্রেপ্তার করে ইউনকে। ইওলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্সিয়াল সিরিয়োরিটি সার্ভিস (পিএসএস)-এর প্রধানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যদিও গ্রেপ্তারির পর ইউনের দাবি, তিনি তদন্তকারীদের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতায় প্রস্তুত ছিলেন। তারপরও এই গ্রেপ্তারি এটাই প্রমাণ করে দেশে আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। তাঁর আইনজীবী জানান, ইউন বুধবারই তদন্তকারীদের সামনে হাজিরা দেবেন বলে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারপরও এভাবে তাঁকে করা হল। দেশের মানুষ পুলিশের এই পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেবে না।
উল্লেখ্য, গত বছর ৩ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক ঘোষণা করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। অভিযোগ তোলেন, উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের মদতে ক্ষমতা দখলের ছক কষছে বিরোধীরা। এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে সামরিক আইন বা মার্শাল ল জারি করা হয়। বকলমে এই আইন দেশে জরুরি অবস্থা লাগু করার সামিল। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল লাইভ সম্প্রচারে জানান, রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে পরাহত করতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশের জনতা। দেশের নানা প্রান্তে শুরু হয় বিক্ষোভ, আন্দোলন। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পথে নামে গোটা দেশ। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও সংসদ ভবনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ সামাল দিতে সংসদ ভবন চত্বরে সেনা নামাতে হয় সরকারকে। তবে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই তা প্রত্যাহার করে নেন প্রেসিডেন্ট। এরপর ১৪ ডিসেম্বর ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভোটাভুটির পর বরখাস্ত হন ইউন। শুরু হয় ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সেখানকার আদালতও।