উপাসনা সেন: এবার পুজোয় (Durga Puja 2022) যে ক’টা ছবি রিলিজ করেছে, তার মধ্যে একেবারে অন্য ঘরানার ছবি দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মিশন এভারেস্ট’ (Mission Everest)। পৃথিবীর সর্বোচ্চতম শৃঙ্গ ঘিরে যুগে যুগে মানুষের নানা অভিযানের কথা আমরা বইয়ে পড়েছি কিংবা ডিসকভারি বা ন্যাট জিও-তে দেখেছি। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এভারেস্ট অভিযান ঘিরে ছবি হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। সেদিক থেকে দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদক্ষেপ অত্যন্ত সাহসী। তবে বাজেট এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার মতো হার্ডল পেরিয়ে এই ছবি বানানো খুব শক্ত কাজ। তাই পরিচালক এবং নিবেদক উভয়েরই প্রশংসা প্রাপ্য।
প্রথমেই বলে রাখি, এই ছবি সুনীতা হাজরার বায়োপিক নয়। কিন্তু তাঁর জীবনের ঘটনা-নির্ভর, সেই সঙ্গে বেশ কিছু কাল্পনিক চরিত্র এসেছে চিত্রনাট্যে। সিনেমা হলে বসেই বাঙালি দর্শক পাবেন তুষারশুভ্র পর্বত দেখার স্বাদ। এভারেস্টের প্রতি মানুষের এক অদ্ভূত আকর্ষণ রয়েছে। প্রতি বছরই বহু মানুষ অভিযানে যান। কেউ শৃঙ্গ শীর্ষে পৌঁছতে পারেন, কেউ পারেন না। কী এমন আকর্ষণ আছে যে, হাজার কষ্ট সহ্য করে, বাধা অতিক্রম করে মানুষ এভারেস্ট ছুঁতে চায়? ছবিটা দেখলে তার সামান্য আন্দাজ পাওয়া যায়।
কী কারণে এভারেস্ট ছুঁতে চায় – পরিচালক বোধহয় এই জায়গাটা ধরতে চেয়েই অত দুর্গম অঞ্চলে শুটিং করার ঝুঁকি নিয়েছেন। জানা যায়, স্পিতি, লাদাখের মাইনাস ২৪ ডিগ্রিতেও শুটিং হয়েছে। প্রায়ই দিনের বেলায় তাপমাত্রা থাকত মাইনাস পনেরো-ষোলো ডিগ্রি। সেই সঙ্গে অক্সিজনের অভাব, পর্বতারোহণের পোশাক পরে শুটিংয়ের কন্টিনিউটি বজায় রাখাও খুবই কঠিন ছিল।
[আরও পড়ুন: জমল না ‘বোধন’, দুর্বল চিত্রনাট্যে ভরাডুবি ‘হইচই’-এর নতুন ওয়েব সিরিজের]
গল্পটা কেমন? সারা পৃথিবীর পর্বতারোহীরা বেস ক্যাম্পে জড়ো হয় শৃঙ্গ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে। আবহাওয়া, দিনক্ষণ বুঝে যাত্রা শুরু হয়। এমনই এক উৎসাহী দল তাদের যাত্রা শুরু করে। যাদের নেতৃত্বে তুখড় এক পর্বতারোহী রাজীব (দীপশংকর দে) । যার বাবা একসময় এভারেস্ট অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। পর্বত নিয়ে রাজীবের এক যন্ত্রণার অতীত আছে। সাতজনের দলে তরুণরা যেমন রয়েছে, তেমন সুদেববাবুর (গৌতম মুখোপাধ্যায়) মতো প্রবীণও রয়েছে। আছে এক ফুচকা বিক্রেতা, যে একটু একটু করে অভিযানের জন্য পয়সা জমিয়েছে।
পারমিতা (মেঘা চৌধুরী) নামের এক তরুণী রয়েছে, যে পৈতৃক বাড়ি বেচে অভিযানের টাকা জোগাড় করেছে। রয়েছে সুছন্দা হাজরা (চান্দ্রেয়ী ঘোষ) যে গৃহবধূ কিন্তু এর আগে দু’বার শৃঙ্গ জয়ের চেষ্টা করেছে। ঘরে স্বামী-সন্তান রেখে সেও এসেছে অপূর্ণ স্বপ্ন ছোঁয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে। এই চরিত্রটিই সুনীতা হাজরার আদলে তৈরি। সাতজনের এই দলটির যাত্রাপথের নানা ঘাত-প্রতিঘাত নিয়েই ছবির কাহিনি।
অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসলে এই ছবি দেখতে পারেন। তবে ছবির চিত্রনাট্যের বুনট জমাট নয়। যদিও প্রয়াস সাধুবাদ যোগ্য। সাংবাদিকের চরিত্রে চৈতি ঘোষাল, অভিজ্ঞ প্রাক্তন পর্বতারোহীর চরিত্রে শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় রয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে রানা মিত্র, কৃষ্ণকিশোর মুখোপাধ্যায়, বিদিশা চৌধুরী এঁদের স্বল্প সময়ের জন্য দেখা যায়। বাস্তবের কয়েকজন শেরপাও এই ছবিতে রয়েছেন। যেমন তাশি, লাপা। প্রধান অভিযাত্রীর চরিত্রে চান্দ্রেয়ী ঘোষ, দীপশংকর দে, মেঘা চৌধুরী, গৌতম মুখোপাধ্যায়, অম্লান মজুমদার, তীর্থংকর রায়, কৌশিক কর, সঞ্জয় দাস প্রমুখ অভিনয় করেছেন।
সুনীতা হাজরা ২০১৬ সালে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছিলেন এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে। সেই হাড়হিম করা অভিজ্ঞতা ছবির অনুপ্রেরণা। বৃটিশ পর্বতাতোরোহী লেসলির সাহায্যে তিনি বেঁচে ফিরেছিলেন। লেসলি নিজের অভিযান সম্পন্ন না করে সুনীতাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন। যাঁরা পাহাড় ভালবাসেন, তাঁদের এই ছবি ভাল লাগবে।
সিনেমা – মিশন এভারেস্ট
অভিনয়ে – চান্দ্রেয়ী ঘোষ, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, দীপশংকর দে, মেঘা চৌধুরী, গৌতম মুখোপাধ্যায়, অম্লান মজুমদার, তীর্থংকর রায়, কৌশিক কর
পরিচালনায় – দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়