শম্পালী মৌলিক: এ প্রায় নির্ভুল লগ্ন বুঝে ছবি রিলিজ করা। ঠিক জামাইষষ্ঠীর দিনে মুক্তি পেয়েছে ‘আবার বিবাহ অভিযান’ (Abar Bibaho Obhijaan)। আগের ছবিটি যেখানে শেষ হয়েছিল ঠিক সেখান থেকেই ফ্র্যাঞ্চাইজির দ্বিতীয় ছবির গল্প শুরু। ফলে মেলোড্রামার লাইসেন্স পূর্বসূরির থেকে অধিকৃত। চরিত্র একই তবে নতুন অভিযান।
ছড়াওয়ালা কবিতার ধাক্কায় জেল থেকে ছুটি পেয়েছে বুলেট সিং অর্থাৎ গণশা (অনির্বাণ ভট্টাচার্য)। তার হাতে জেলতুতো বন্ধু জিকোর দেওয়া একশো কোটি সম্পত্তির কাগজ। সে ভাগ করে নিতে চায় বন্ধু রজত (রুদ্রনীল ঘোষ) আর অনুপমের (অঙ্কুশ হাজরা) সঙ্গে। তবে থাইল্যান্ডে গিয়ে তিনদিনের মধ্যে একশো কোটি প্রপার্টির দখল নিতে হবে, নয়তো বেওয়ারিশ হয়ে যাবে। ব্যস, ধনদৌলতের লোভে গণেশ-রজত-অনুপমের ‘থইল্যান্ড’ যাত্রা। দুই বউ মায়া (সোহিনী), রাইকে (নুসরত ফারিয়া) তারা বলেও ফ্যালে ধন-দৌলত প্রাপ্তির কথা। সেটা বেশ পরে জানতে পারে বুলেটের বউ মালতীও (প্রিয়াঙ্কা)।
থাইল্যান্ডে গিয়ে অদ্ভুত এক চরিত্র মাইকেলের (সৌরভ দাস) সঙ্গে দেখা হয় তিন বন্ধুর। যে নাকি হাফ ব্রাজিলিয়ান-হাফ রাশিয়ান। অতএব তার সমস্ত কথার শেষে ‘স্কি’ জুড়ে থাকে। তবেই না রাশিয়ান! বউ যতই ‘সোন্টুমনা’ হোক বা ‘বুলটি’ হোক আদতে বরেরা হাত ফসকে বেরতেই চায়, সে সব কথা ঘুরে ফিরে আসে রুদ্রনীল ঘোষের লেখা চিত্রনাট্যে। অনিমেষ ঘড়ুইয়ের ক্যামেরায় বিদেশি লোকেশন দেখতে দেখতে আর জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে ‘সবই মায়া’ শুনে দর্শক স্পন্দিত প্রেক্ষাগৃহে! ‘স্বামী হয়েও আসামী’ সংলাপে পড়ছে হাততালি।
[আরও পড়ুন: IPL চলাকালীনই সারার সঙ্গে বিচ্ছেদ শুভমনের, ইনস্টাগ্রামে বড় ইঙ্গিত]
যাই হোক, গল্প এগোলে বরেরা বেপাত্তা বুঝে পুলিশে যায় তিন বউ। দ্রুত বিদেশ পাড়ি দেয় তারা স্বামী উদ্ধারে। ওদিকে সম্পত্তির গ্যাঁড়াকলের সঙ্গে জুড়ে আছে কৃষ্ণভক্ত এক মেয়েকে বিয়ে করার শর্ত! এ সব কিছুই জানত না তিন বন্ধু। সে এক হিলারিয়াস কাণ্ড! নানা ঠগবাজের খপ্পর থেকে কীভাবে তিন বন্ধু উদ্ধার পায় তাই নিয়েই সৌমিক হালদারের এই ছবি। ‘রুদালি’ বউদের কান্না কীভাবে বরেদের ম্যাচ জেতায়–এই সব ঘটনা আমদর্শকের দেখতে মজা লাগবে। তবে ওই, সব সহ্য করেও সনাতন ভারতীয় নারীর পতিপ্রেম বজায় রাখার প্রয়াস ক্লিশে। অবশ্য এ ছবি আদ্যন্ত কমার্শিয়াল মশালা ঘরানার।
সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের যেন মন-মাঝারে প্রত্যাবর্তন হল এই ছবিতে, দর্শক নাচবে। অনির্বাণ-দেবরাজ জুটিতে ফুরফুরে টাইটেল ট্র্যাক গেয়েছেন। যুক্তি-বুদ্ধি বাইরে রেখে ‘এনজয়স্কি’ চাইলে চেখে দেখতে পারেন ‘আবার বিবাহ অভিযান’। অনির্বাণ সম্পূর্ণ ভিন্নরূপে ছবির ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’। কিছুটা ওভার দ্য টপ হয়েও মন জয় করেছেন সোহিনী। রুদ্রনীল তাঁর অতি-চেনা মেজাজে। ছবি যত ক্লাইম্যাক্সের দিকে এগোয় রুদ্র ছক্কা হাঁকিয়েছেন। সৌরভ চরিত্রের চাহিদা মিটিয়েছেন। নুসরত ফারিয়া, প্রিয়াঙ্কা ঠিকঠাক। অঙ্কুশের কমিক টাইমিং ভাল। তবে ‘ইন ফিল্ম প্রোমোশন’ কম হতে পারত। আর সংলাপের কেরামতি করতে গিয়ে ছবিটা কিছুটা মন্থর হয়েছে। দৈর্ঘ্য একটু কম হতে পারত। তবে দেখতে বসলে শেষ হয়ে যাবে বুলেটের টানে। আর ম্যান অফ দ্য ম্যাচ অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তাঁর অননুকরণীয় বাচনভঙ্গী মনে থেকে যাবে।
সিনেমা – আবার বিবাহ অভিযান
অভিনয়ে – অঙ্কুশ হাজরা, অনির্বান ভট্টাচার্য, রুদ্রনীল ঘোষ, সোহিনী সরকার, প্রিয়াঙ্কা সরকার, সৌরভ দাস, নুসরত ফারিয়া
পরিচালনায় – সৌমিক হালদার