যতই পরিবর্তনের জোয়ার আসুক, মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে আগ্রহ কমবে না। বিনিয়োগের বাজারে এখনও মিউচুয়াল ফান্ডের কোনও বিকল্প নেই। আস্থার অপর নাম বলাই যায়। কিন্তু কিছু বিষয়ে নজর না দিলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অধরাই থেকে যেতে পারে। তা কী কী, ধরিয়ে দিলেন অরবিন্দ কুণ্ডু
যদি গত দুই দশকের অভিজ্ঞতা ধরি, তাহলে বলতে হয় ক্যাপিটাল মার্কেটে তো কত কিছুই ঘটেছে। বাজারের ওঠাপড়া, বিভিন্ন অ্যাসেট ক্লাসের ভোলাটিলিটি, ইনভেস্টরদের ধনরাশি বৃদ্ধি এবং অবশ্যই প্রচুর নতুন ধরনের রেগুলেশন-সব মিলিয়ে বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছি। প্রযুক্তির আবির্ভাব এবং তার অভিঘাত, সে কথা তো ছেড়েই দিলাম। এরই মধ্যে দু’রকম খাঁটি সত্যি নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে-এক, বহু মানুষ সু-পরামর্শের ভিত্তিতে, সুপরিকল্পিত উপায়ে ওয়েলথ ক্রিয়েশন করতে পেরেছেন। দুই, বহু মানুষ যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বন না করার ফলে ওয়েলথ ক্রিয়েশনের সুযোগ হারিয়েছেন।
তৃতীয় একটি কথাও বলতে চাই এই প্রসঙ্গে। মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগের বাজারে এক বিকল্প-হীন, স্থায়ী এবং স্বতন্ত্র পন্থার হদিশ এনে দিয়েছে। এর কারণগুলি পরিষ্কার। খুব সংক্ষেপে এখানে একবার ঝালিয়ে নিচ্ছি।
# লাম্পসাম বলুন অথবা সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট-সহজেই সব কিছু করা সম্ভব।
# খুব গুছিয়ে ইকুইটি মার্কেটে লগ্নি করতে পারবেন, বিশেষত যখন ইকুইটির দাম কম। এবং পরে বাজার বাড়লে প্রয়োজন মেটানোর জন্য বিক্রি করতে পারেন।
# ফিনান্সিয়াল গোলস ঠিক করে নিয়ে, নিজের রিস্ক প্রোফাইল মেনে সঠিক ফান্ডগুলি বেছে নেওয়া যাবে।
# খেয়াল করবেন, পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার সাধারণ ইনভেস্টরদের তুলনায়, অনেক উন্নত পদ্ধতি মেনে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
[আরও পড়ুন: সহজ লগ্নিতে নিরাপত্তার আশ্বাস, জেনে নিন এই ঋণপত্রের লাভ]
এবার আসি এরই সম্পর্কিত এক জরুরি প্রসঙ্গে। এক কথায় বলতে গেলে, আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়। বুঝিয়ে বলা যাক। বিপদে পড়লে বুঝবেন, আমি লগ্নিকারীর ব্যবহার নিয়ে বলছি। ইনভেস্টর হিসাবে কি আপনি সব কিছু ঠিকঠাক করেছেন? লগ্নি করে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন ফল যাতে যথাযথভাবে মিলতে পারে? না কি একেবারে শর্ট টার্ম রিটার্নের উপর নজর রেখেছেন বেশি? আমার অভিজ্ঞতা বলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেমনই দেখা যাচ্ছে।
এই পর্যন্ত তো কেবল একটি দরকারি প্রসঙ্গ তুললাম। এরই সঙ্গে বলি, আপনার পরামর্শের ভূমিকাও যেন ইতিবাচক হয়, তারও কিন্তু নিজস্ব নিয়ম-নীতি আছে। বাস্তবিক, পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার এবং রেগুলেটর, সব পক্ষই (ইনভেস্টর ও অ্যাডভাইসার তো বটেই) যেন নিজেদের ভূমিকা সুষ্ঠুভাবে পালন করে চলেন। তাহলেই সাফল্য আসবে।
ন্যারেটিভটি এবার একটু ঘুরিয়ে দিই। আমার মতে, প্রতিটি লগ্নিকারীকে কয়েকটি সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে হবে। বিনিয়োগের ব্যক্তিগত পরিসরে তাহলে সুফল পাবেন তিনি।
সঙ্গে দেওয়া পয়েন্টগুলি পড়ুন।
# নিজের টাইম হরাইজন থেকে ইনভেস্টমেন্ট অবজেকটিভ ঠিক করুন।
# ইনভেস্টমেন্ট থেকে ইমোশন সরিয়ে রাখুন।
# পাঁচ বছরের বেশি সময় আছে? ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি করুন।
# প্রতিবার সামান্য কারণে ন্যাভ দেখবেন না-লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতে পারেন, বিশেষত যদি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করে থাকেন। ইকুইটি মার্কেট সাইকেল চলতেই থাকে। বাড়া-কমার মধ্যে আপনাকে লং টার্মের জন্য তৈরি থাকতে হবে। যখন বাজার পড়বে, তখন নতুন অ্যালোকেশন করা যায় কি না, দেখুন। আপনার চারদিকে নানা রকম পরস্পর-বিরোধী আওয়াজ উঠবে, এগুলি যেন আপনাকে অযথা বিচলিত না করে। ভাল সুযোগ খঁজুন এরই মধ্যে।
(লেখক ডিরেক্টর, সাফল্য ও সমৃদ্ধি এলএলপি)