জীবনে শুধু সঠিকটাই হবে, কোনও বেঠিক বা ভুল-ভ্রান্তি হবে না-এটা ভাবাটা বোকামি। মিউচুয়াল ফান্ডেও এই নীতি প্রযোজ্য। যেটা দরকার, সেটা হল ভেবে-চিন্তে পা বাড়ানো। যদি ভুল হয়েও যায়, সেক্ষেত্রে ‘কারেক্টিভ স্টেপস’ নিয়ে এগিয়ে চলাই শ্রেয়। বিস্তারিত জানাচ্ছেন প্রসূনজিৎ মুখার্জি
আপনারা অনেকেই অনেকদিন ধরে মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে লগ্নি করছেন এই বিশ্বাসে যে, মোটামুটি নানা সুচিন্তিত বক্তব্যের বা বিশ্লেষণের অধিকাংশই ঠিক হবে। যদি বলি যে অভিজ্ঞতার আলোয় দেখলে বোঝা যাবে যে বহু সিদ্ধান্তই ভুল, তাহলে কেমন লাগবে? বা, যদি বলি যে আজকের যা তথ্য ঠিক ভাবছেন, তা কাল হয়তো ভ্রান্ত প্রমাণিত হবে, আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন-তাহলে?
আসলে ভুলচুক (ও অন্যদিকে কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত) নিয়েই মানুষ। পোর্টফোলিওর খামতিগুলি স্বীকার করা ও ভুল শোধরানোই (‘কারেকটিভ স্টেপস’) অন্যতম প্রধান কর্তব্য – এই বার্তা দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য। আমার মূল বিষয়, বুঝতেই পারছেন, মিউচুয়াল ফান্ড।
[আরও পড়ুন: আপনার পলিসি কি সেরা ক্যানসার কভার দেয়?]
প্রথমেই বলি, ফান্ডকে সাধারণ ফাইন্যান্সিয়াল প্রোডাক্ট হিসাবে দেখবেন না। বহু বন্ধুবান্ধব আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করেন, “আচ্ছা ফান্ডে এককালীন লগ্নি করব, না সিপ করব?” অথবা বলেন, “অমুক ফান্ড ২৫% রিটার্ন দিয়েছে, সেখানেই বিনিয়োগ করতে চাই।” এই সব ইস্যু ভালভাবে বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
আরও তলিয়ে দেখলে বুঝবেন, মিউচুয়াল ফান্ড ‘সময়’ নামক ‘ফ্যাক্টর’-এর দাস। এখানে মূলত ইকুইটি ফান্ডের কথা ধরেই চলছি। সময় অনেক কিছু উপহার যেমন দেয়, তেমনই অনেক কিছু হরণও করে। ইকুইটিতে ট্রেন্ড বা প্যাটার্ন (অথবা সাইকেল) খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় কিছু ফান্ড এই সব প্যাটার্নের ভিত্তিতে ভাল ‘পারফর্ম’ করে -তেমনই অন্য একাংশ নিচে তলিয়ে যায়। উপরে যাওয়া বা নিচে পড়ে যাওয়া, কিছুই প্রায় চিরস্থায়ী তো হতে পারে না! তাই উত্থান-পতন ঘিরেই লগ্নিকারীকে তাঁর ‘এক্সপেক্টেশন’ তৈরি করতে হয়।
যে ফান্ড নিজস্ব (ভাল) পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারে, ‘অ্যাভারেজ প্লেয়ার’দের চাইতে উন্নতমানের রিটার্ন ধারাবাহিকভাবে আনে, সেটিকে চিহ্নিত করা তো সোজা। তবে ধারাবাহিকতার রেশ সবসময় থাকবে না, তালভঙ্গ হবে, এও শাশ্বত সত্য। বুদবুদ তৈরি হয়, ক্ষণস্থায়ী চিত্রটি নষ্ট হয়ে যায় অচিরেই-এমন তো আমরা প্রায়শই দেখি।
এই প্রসঙ্গেই চলে আসে আমাদের একান্ত চাহিদার কথা। প্রতিটা টাইম ফ্রেমে একই ফান্ড ম্যানেজার নিয়মিতভাবে ভাল করছেন, তা প্রায় হয় না বললেই চলে। বছর দেড়েক ধরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, আর তারপরেই মুখ থুবড়ে পড়া-অহরহ হয় স্টক মার্কেটের অনিশ্চয়তার মাঝে। সাধারণ রিটেল ইনভেস্টররা যেন কিছু ভাল ‘হ্যাবিট’ গঠন করেন, এমনটাই তাঁদের বলতে চাই। সময় আপনাকে সুযোগ দেবে, কম্পাউন্ডিং করায় সাহায্য করবে।
শেষ করি আমার নিজস্ব একটি তত্ত্ব (আমার একান্ত বিশ্বাসও বটে) দিয়ে। একজন ফান্ড ম্যানেজার ৮-১০ বছর ধরে, কম্পাউন্ডিং-এর হিসাবে যদি ধরেন, মনে করুন ১২% রিটার্ন দিয়ে গিয়েছেন। এবং অন্য একজন তাঁরই সতীর্থ, খুব স্বল্প সময়ের জন্য ২৫% দিয়ে চমকে দিয়েছেন। আমি প্রথমজনকে প্রাধান্য দেব। অভিনন্দন জানাব। আশা করি আপনারাও বলবেন, ‘সাবাস!’
(লেখক myplexus.com-এর চিফ অ্যানালিস্ট)