Advertisement
২০০ কোটি বছরের পর্বতে কেন পুঁজিপতিদের নজর? আরাবল্লীর 'মৃত্যু' ডেকে আনবে বিরাট বিপর্যয়!
কেন এত বিতর্ক ‘খনিজের জাদুঘর’ আরাবল্লী নিয়ে?
গোটা পৃথিবীতেই মৃত্যুমুখে সবুজ প্রকৃতি, মানুষ তবু গাজা, ইউক্রেন, যুদ্ধ, ধর্ম নিয়ে ব্যস্ত। আত্মঘাতী হোমো সেপিয়েন্সের দল এবার উন্নয়নের ‘অস্ত্রে’ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন পর্বত আরাবল্লী ধ্বংসের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছে! অভিযুক্ত কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। এমনকী সুপ্রিম রায় নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করছেন বিজ্ঞানী ও সমাজকর্মীরা। কেন এত বিতর্ক হচ্ছে ‘খনিজের জাদুঘর’ আরাবল্লী নিয়ে?
উত্তর-পশ্চিম ভারতের ফুসফুস আরাবল্লী! দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং গুজরাটের মধ্য দিয়ে প্রায় ৬৯২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত প্রাচীন পাহা়ড়শ্রেণি গত ২০০ কোটি বছর ধরে উত্তর-পশ্চিম ভারতের অন্যতম ঢাল হিসাবে দাঁড়িয়ে। যদিও প্রকৃতিপ্রেমীদের আশঙ্কা আগামী ২০৫৯ সালের মধ্যে সবটাই অতীত হয়ে যেতে পারে।
নতুন বিতর্ক শুরুর অনেক আগেই গবেষকরা সতর্ক করেছিলেন, আরবল্লীর ১৬,৩৬০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি বনভূমি মানববসতির কারণে বিলুপ্তির পথে। এরসঙ্গে জুড়েছে পুঁজিপতিদের খনিজের লোভ। কেউ কেউ বলছেন, শিল্পপতি বন্ধুদের পকেট ভরাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের ফুসফুসকে বলি দিতে তৈরি মোদি সরকার।
আরাবল্লী পর্বতমালা খনিজ সম্পদে ভরা। স্যান্ডস্টোন, লাইমস্টোন, গ্রানাইট, মার্বেল পাথরের বিপুল ভাণ্ডার রয়েছে এখানে। এছাড়াও সোনা, তামা, দস্তা, লেড–এর মতো মিনারেল সমৃদ্ধ এই পাহাড়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিপতি শিল্পপতিদের লোভাতুর নজর রয়েছে এই পর্বতশ্রেণির উপর। সাধে কি আরবল্লীর ডাক নাম 'খনিজের জাদুঘর'।
খনিজ ছাড়াও আরবল্লী থেকে আরও অনেক ভাবে উপকৃত মানুষ। যেমন, থর মরুভূমি থেকে উড়ে আসা বালি এবং ধূলিকণাকে রুখে দেয় এই অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণি। এমনকী দিল্লির বায়ুদূষণ কমাতেও সাহায্য করে। সঙ্গে নিকটবর্তী ৩৭টি জেলার বহু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রয়োজনীয় জ্বালানি কাঠ, পশুখাদ্য, ভেষজ গাছ সংগ্রহ করেন আরাবল্লির বনভূমি থেকে।
মানুষ হাত পেতে আছে, 'দেবতা' আরবল্লী তা কত ভাবে যে পূরণ করে চলেছে সেই চাহিদা! ভূগর্ভের জল পূরণ করতে, মাটির ক্ষয় রুখতে, মরু অঞ্চল নিবারণে, ধুলো-বালির ঝড় আটকে দিতে, বন্যপ্রাণীর আবাস এবং যাতায়াতের পথ হিসাবে, ক্ষুদ্র জলবায়ু পরিমণ্ডল ধরে রাখতে আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণি অপরিহার্য।
আরবল্লী নিছক একটি পর্বত বলতে নারাজ প্রকৃতিপ্রেমীরা। পরিবেশ রক্ষক নিলম আহলুওয়ালির দাবি, পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন পর্বতকে ধ্বংস করে ফেলতে চাইছে সরকার। যা কেবল মরভূমির প্রসারে প্রাকৃতিক বাধা হিসেবেই কাজ করে না, দেশের একটা বড় অংশে জল ও বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করে। আরবল্লী রক্ষায় আন্দোলনকারী সাংবাদিক অরবিন্দ চোতিয়া বলেন, ‘একটা ১০০ মিটার ফিতে দিয়ে আরাবল্লিকে মাপা সম্ভব? এটি শুধু একটা পাহাড় নয়, এটা আমাদের লাইফলাইন।’
আরাবল্লীর অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা বাড়াচ্ছে কেন্দ্র এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা। গত ২০ নভেম্বর শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়, পর্বতশ্রেণির ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার অংশ সুরক্ষিত থাকবে। অর্থাৎ ১০০ মিটারের কম উচ্চতার পাহাড়গুলি সংরক্ষণের আওতায় থাকবে না। অন্যদিকে কেন্দ্রের দাবি, আরাবল্লি অঞ্চলের ৯০ শতাংশই ‘সুরক্ষিত’ থাকবে। কীভাবে সম্ভব?
সমাজমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব লিখেছেন, ‘‘আরাবল্লির মোট ১.৪৪ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে খনির কাজ কেবল ০.১৯ শতাংশ এলাকায় হতে পারে। বাকি সমগ্র আরাবল্লি সংরক্ষিত এবং সুরক্ষিত।’’ সরকার আরও জানিয়েছে, আরাবল্লির জন্য প্রাথমিক হুমকি হল, অবৈধ এবং অনিয়ন্ত্রিত খনন। তা রুখতে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এরপরেও অবশ্য ভবি ভুলতে নারাজ।
পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের দাবি, ৬৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত অঞ্চল’ ঘোষণা করুক সরকার। সেখানে যেন সব ধরনের খননকাজ অবিলম্বে বন্ধ করা হয়। সোমবারই আরাবল্লী মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ২০ নভেম্বরের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। শেষ পর্যন্ত এ যাত্রায় কি বেঁচে যাবে আরবল্লী? সেই সঙ্গে বিরাট বিপর্যয় থেকে বাঁচবে মানুষও?
Published By: Kishore GhoshPosted: 04:56 PM Dec 29, 2025Updated: 05:08 PM Dec 29, 2025
Sangbad Pratidin News App
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
